

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অভাবনীয় সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। সাংগঠনিকভাবে জামায়াতকে বেশ সুসংগঠিত মনে হয়।
মিডিয়াও ভাল কাভারেজ দিচ্ছে। রাজনৈতিকভাবে ও প্রচারণায় তাদের বেশ সোচ্চার দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় নির্বাচন হলেও জামায়াতের লাভ। না হলেও আবার জামায়াতের লাভ! বলা যায় তারা অনেকটা “win-win” সিচুয়েশন তথা “Catch 22” পজিশন বা “দা ও কুমড়া”র মতো অবস্থায় আছে।
দা উপর থেকে নিক্ষেপ করলে কুমড়া কাটবে, দা’র কোনো ক্ষতি নেই। অনুরুপভাব কুমড়া উপর থেকে ফেললে সেই কুমড়াই কাটবে, দা’র কোনো ক্ষতি হবে না!
নির্বাচনি রাজনীতিতে স্বাধীন বাংলাদেশের গত ৫৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে এবং কমফোর্টেবল জায়গায় এখন আছে জামায়াত। এমন অভাবিত কমফোর্ট জোনে জামায়াত অতীতে কখনো ছিল না। চিন্তা করতে পারেন - এক সময় এমন সময়ও গেছে জামায়াতের আমীর সপ্তাহের পর সপ্তাহ পার করেছেন কিন্তু শুক্রবারে জুমার নামাজ আদায় করতে মসজিদে পর্যন্ত যেতে পারেননি।
দু’রাত এক বাসায় বা এক ঠিকানায় থাকতে পর্যন্ত পারেননি। তাদের কেন্দ্রীয় অফিস ছিল তালাবদ্ধ বছরের পর বছর। তুলনা করেন ঐ সময়ের কঠিন অবস্থাকে বর্তমান সুবিধাজনক অবস্থার সাথে!
সুতরাং বর্তমান সুবিধাজনক অবস্থায়ই তো জামায়াত একান্তভাবে চাইবে নির্বাচন হোক যাতে তাদের প্রকৃত জনসমর্থন কত তা বুঝতে পারে।
অতীতের নির্বাচনগুলোতে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাত (যথাক্রমে ৪%, ৮%, ১২%) ও আসন (যথাক্রমে ৩, ১০, ১৮) ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তেমন উল্লেখ করার মত ছিল না। তবে এটাও ঠিক পূর্বের প্রাপ্ত ভোট ও সিটের অনুপাত ও সংখ্যা থেকে জামায়াতের সঠিক সমর্থন বোঝা যাবে না, কেননা অতীতের বেশিরভাগ নির্বাচনে তারা একা নয় বরং নির্বাচন করেছে জোটবদ্ধভাবে।
গণঅভ্যুত্থানের পর জামায়াতের ভোট ও সাপোর্ট নিঃসন্দেহে বেড়েছে । তবে কত বেড়েছে বা কী পরিমাণ বেড়েছে তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আগামী নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
অপরদিকে, নির্বাচন না হলেও জামায়াতের লাভ! তারা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যেভাবে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন, শীর্ষ নেতৃবৃন্দ প্রটোকল পাচ্ছেন, অবাধে চলাফেরা করছেন, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার স্কোপ হচ্ছে ও ব্যাপক মিডিয়া কাভারেজ পাচ্ছেন তা আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলেও চলমান থাকবে।
ফলে তারা তাদের সাংগঠনিক ভিত্তি আরো মজবুত ও দেশজুড়ে দলীয় প্রচারণা আরো ব্যাপকভাবে চালানোর প্রয়াস পাবেন।
তবে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে অনেক কিছুর অবস্থা, নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব এখন যেভাবে আছে সেভাবে থাকবে না এটা অনেকটা নিশ্চিত করে বলা যায়।
অন্য বা অন্যদের হাতে চলে যেতে পারে। নির্বাচন পিছিয়ে গেলে দেশে, শাসনতন্ত্রে ও রাজনৈতিক মাঠে অনেক উপসর্গ দেখা দেবে।
নতুন পরিবর্তিত পরিস্থিতি এখনকার মতো যেভাবে আছে সমানভাবে তখন নাও থাকতে পারে। মনে রাখা দরকার এলোমেলো বা হ-য-ব-র-ল অবস্থায়, কিন্তু অনেক এ্যাক্টর ও স্টেকহোল্ডার জড়িয়ে সমস্যাকে আরো জটিল করে তোলে।
জামায়াত চাইলে পিআর ও নির্বাচনের আগে গণভোট নিয়ে গোটা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে নির্বাচন পেছাতে পারতো।
তাদের আন্দোলন ও বক্তৃতার হাবভাব দেখে এমনটি তো প্রথমে মনে হয়েছিলো! অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করলে কিন্তু বর্তমান দৃশ্যত দূর্বল প্রফেসর ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো না।
জামায়াত সেদিকে শেষ পর্যন্ত যায়নি। বরং তারা এই দুটি ইস্যুকে গরম গরম মেঠো রাজনৈতিক বক্তৃতা করে তাদের সমর্থকদের চাঙ্গা করা, ঐক্যমত্য কমিশনে রাজনৈতিক ট্রিকস এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবেই ব্যবহার করেছে বলে এখন মনে হয়।
তবে সবকিছু বিশ্লেষণ করে বলা যায় ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হোক জামায়াত আন্তরিকভাবে চাইবে।
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে সহসা দেশে নির্বাচন নাও হতে পারে। আর দেরি হলে নতুন বাস্তবতা ও উপসর্গ আবির্ভূত হবে। তখন তারা তো বটেই, দেশ যারা চালাচ্ছেন তাদেরও নিয়ন্ত্রেণের বাইরে চলে যেতে পারে অনেক কিছু।
এমন পরিস্থিতিতে দেশি, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়রা তখন তাদের ইচ্ছামতো খেলার সুযোগ পাবে। মনে রাখা দরকার, পতিত সরকার ও তাদের দেশি ও বিদেশি অগণিত সাপোর্টাররা কিন্তু বসে নেই। “ইনক্লুসিভ” টার্ম এমনি এমনি বাতাসে আসেনি!
জামায়াত বা অন্য রাজনৈতিক দল বা দলগুলো যাই মনে করুক না কেন - দেশের আপামর জনসাধারণ চায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।
কে ক্ষমতায় যাবে বা কে সরকার গঠন করবে সেটা জনগণকে নির্ধারণ করতে দিন। গত ১৭ বছর দেশের নাগরিক ভোট দিতে পারেনি, নির্বাচন ছিল নির্বাসনে!
১৮ বছর যার বয়স ছিল সে এখন ৩৪, অথচ ভোট কী জিনিস তা পরখ করার সুযোগ হয়নি তার জীবনে। এমন ভোটারদের সংখ্যা দেশে হবে প্রায় চার কোটি। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের এরাই হবে নিয়ামক শক্তি।
লেখক: বিশিষ্ট আইনজীবী, রাষ্ট্রচিন্তক, সংবিধান বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী এবং ইংল্যান্ডের প্র্যাকটিসিং ব্যারিস্টার।
Email: [email protected]
(লেখকের নিজস্ব মতামত)
মন্তব্য করুন
