শুক্রবার
২১ নভেম্বর ২০২৫, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
২১ নভেম্বর ২০২৫, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গভীর রাতে সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ, টিআইবির উদ্বেগ

এনপিবি প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৭ পিএম
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)
expand
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রার-এনইআইআর চালু করা প্রসঙ্গে ভিন্নমত দমনের অপচেষ্টার অংশ হিসেবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া সাংবাদিক ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাকে গভীর রাতে বাসা থেকে তুলে নেওয়ার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। তাদের দীর্ঘ সময় হেফাজতে রাখার ঘটনাকে আইনের শাসন ও মানবাধিকার সুরক্ষার অঙ্গীকার পদদলিত করে নজরদারি ও ভয়ের সংস্কৃতি অব্যাহত রাখার দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করে টিআইবি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ ধরনের অস্বচ্ছ ও জবাবদিহিহীন অভিযান পতিত কর্তৃত্ববাদী আমলের নজরদারি ও ভীতির সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার হতাশাজনক পুনরাবৃত্তি যা অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত আইনের শাসন ও মানবাধিকারভিত্তিক রাষ্ট্র সংস্কার প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একইসঙ্গে নাগরিকদের নিরাপত্তা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও আইনি সুরক্ষাকে গুরুতরভাবে হুমকির মুখে ফেলেছে বলে মনে করে টিআইবি। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে টিআইবি মনে করিয়ে দিতে চায়, সমালোচক মাত্রই শত্রু—এ মনোভাব আত্মঘাতী।

গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) চালু করার সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়ে অংশীজনের সমালোচনার প্রেক্ষিতে একজন সাংবাদিক এবং একজন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাকে মাঝরাতে তুলে নেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবির পক্ষ থেকে কখনো বলা হয়েছে “তথ্য যাচাইয়ের জন্য” আনা হয়েছিল, আবার কখনো বলা হয়েছে, সংবাদ সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্রে সভাপতির পদবি ব্যবহারের পর সাংবাদিকের ব্যক্তিগত ফোন নম্বর ব্যবহারের কারণে তাকে আনা হয়।

এ ধরনের পরস্পরবিরোধী ব্যাখ্যা ও প্রকান্তরে মিথ্যাচারের নিন্দা করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “ভিন্নমত দমনে গভীর রাতে কারণ না জানিয়ে বাসা থেকে তুলে নেওয়া, অভিযোগ গোপন রাখা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর বক্তব্যে অসঙ্গতি—কর্তৃত্ববাদী নিপীড়নমূলক চর্চা অব্যাহত রাখার উদ্বেগজনক দৃষ্টান্ত। এ আচরণ শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘনের দৃষ্টান্ত নয়, বরং রাষ্ট্র সংস্কারের ওপর জনগণের আস্থাকে ধুলিসাৎ করার ঝুঁকি তৈরি করেছে। অভিযোগ থাকলে আইন অনুযায়ী সমন পাঠানো, স্বাভাবিক সময়ে আইনজীবীর উপস্থিতি নিশ্চিত করে জিজ্ঞাসাবাদ করার বাধ্যবাধকতাকে উপেক্ষা করে গভীর রাতে বাসা থেকে তুলে নেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

ড. জামান বলেন, “আমরা এ প্রসঙ্গে এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসহ বাংলাদেশের সকল গোয়েন্দা ও নজরদারি সংস্থার আমূল সংস্কারের আহ্বান জানাচ্ছি। শুধু কতিপয় ব্যক্তির পরিবর্তন যথেষ্ঠ নয়, দীর্ঘদিনের লালিত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার নামে নজরদারি ও মানুষের অধিকার হরণের যে সংস্কৃতিকে প্রাতিষ্ঠানিকতা দেওয়া হয়েছে, তা বজায় থাকলে ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। অন্যদিকে, সরকারের দায়িত্বশীল অবস্থানে অধিষ্ঠিত মহলকে ভিন্নমত প্রকাশকারী বা সমালোচক মাত্রই শত্রু—এই মানসিকতা প্রত্যাখান করার সৎসাহসের পরিচয় দিতে হবে।”

গণমাধ্যম সূত্রে আরো জানা যায়, ডিবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, একটি প্রতিষ্ঠান সরকারি নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করতে চাইলে রাষ্ট্র উদ্দেশ্য জানতে চাইতেই পারে।

এ ধরনের বক্তব্য মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার লঙ্ঘনের দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, “গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকারি নীতি বা প্রস্তাবিত আইন, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের এনইআইআর চালুর ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন তোলা, ভিন্নমত প্রকাশ বা সমালোচনা করা নাগরিক, সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও বিভিন্ন পেশাজীবী গোষ্ঠীর সাংবিধানিক অধিকার; এগুলো অপরাধ বা নিরাপত্তা-ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। একটি বৈধ সংবাদ সম্মেলন কেন্দ্র করে গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করা ভয় ও হুমকির সংস্কৃতি সৃষ্টি করে। সমালোচনা সইবার ও ভিন্নমতের গুরুত্বের স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থতা প্রকান্তরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর কাপুরুষোচিত হস্তক্ষেপ।”

“সংবিধানের ৩৭, ৩৮ ও ৩৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী—যে কোনো ব্যক্তি, সংগঠন বা পেশাজীবী গোষ্ঠীর শান্তিপূর্ণভাবে মতামত প্রকাশ, সমাবেশ আয়োজন, সংবাদ সম্মেলন করা এবং নীতির সমালোচনা করার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের এনইআইআর বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে ভিন্নমত প্রকাশ ও সমালোচনা করার জন্য সাংবাদিক বা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মহলের সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত থাকা কীভাবে আইনগত, নৈতিক বা রাষ্ট্রীয় প্রশ্নবিদ্ধতার কারণ হতে পারে—এ ব্যাখ্যা সরকারকেই দিতে হবে। ঘটনাটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ এবং সংগঠনের অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ ও ভয়ের সংস্কৃতি অব্যাহত রাখার ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে, যা সংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন