

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


রাজধানীতে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল প্রকল্পের দুটি নির্মাণ প্যাকেজে নিযুক্ত ঠিকাদারদের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) পক্ষ থেকে সম্প্রতি জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) বাংলাদেশ অফিসে পাঠানো দুটি পৃথক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক মো. আফতাব হোসাইন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিগুলো গত রোববার ও সোমবার পাঠানো হয়। এর পেছনে কারণ হিসেবে বলা হয়েছে—প্রকল্পের অনুমোদিত বাজেটের তুলনায় দর অনেক বেশি হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত বিবেচনায় আনা হচ্ছে।
ডিএমটিসিএলের ৭১তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যদি ঠিকাদাররা নির্ধারিত খরচের তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে বেশি দর দাবি করে, তবে তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের বিষয়ে জাইকার অনুমোদন নেওয়া যেতে পারে। তবে “অত্যধিক ব্যয়” বলতে বাজেটের কত শতাংশ বেশি হলে তা অযৌক্তিক ধরা হবে—এ বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
বাতিলের জন্য বিবেচনায় থাকা দুটি প্যাকেজ হলো সিপি-২ ও সিপি-৫। সিপি-২: রূপগঞ্জ ডিপো এলাকার অবকাঠামো নির্মাণের কাজ, যেখানে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চীনের সিনোহাইড্রো। সিপি-৫: নর্দা থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত টানেল ও স্টেশন নির্মাণ, যার দায়িত্বে রয়েছে জাপানি প্রতিষ্ঠান কাজিমা করপোরেশন।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুখ আহামেদ জানান, এটি মূলত একটি আলোচনার সুযোগ তৈরি করার উদ্দেশ্যে পাঠানো চিঠি। এখনই বাতিল করা হচ্ছে না। যদি ব্যয় যৌক্তিকভাবে কমানো যায়, তাহলে আগের ঠিকাদাররাই কাজ করবে। অন্যথায় নতুন দরপত্র আহ্বান করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালের খরচের হিসাব ২০২৪ সালের বাজারদরের সঙ্গে এক নয়। সাধারণত ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি গ্রহণযোগ্য ধরা যায়, কিন্তু ৫০ শতাংশের বেশি হলে তা অস্বাভাবিক।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাতাল মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ শুরু হয়, লক্ষ্য ছিল ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্প সম্পন্ন করা। কিন্তু গত এক বছরে কাজের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। এমনকি সব নির্মাণ প্যাকেজের চুক্তিও এখনো সম্পূর্ণ হয়নি।
সূত্র জানায়, আগের সরকারের সময় সম্পাদিত কিছু চুক্তি নিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পুনর্বিবেচনা করছে। এর ফলে চূড়ান্ত অনুমোদনে দেরি হচ্ছে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নও ধীরগতিতে এগোচ্ছে। প্রয়োজনে জাইকার সঙ্গে থাকা ঋণচুক্তি পুনর্মূল্যায়নের কথাও ভাবা হচ্ছে।
ডিএমটিসিএলের সাম্প্রতিক বৈঠকের কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে—লাইন–১ এবং লাইন–৫ (উত্তর ও দক্ষিণ) প্রকল্পের কাজ সীমিত পর্যায়ে আছে এবং নিকট ভবিষ্যতে পূর্ণমাত্রায় বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।
বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান মনে করেন, চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তের আগে ব্যয় বৃদ্ধির কারণ ও যৌক্তিকতা যাচাই করা দরকার। সরাসরি বাতিলের উদ্যোগ বিনিয়োগ পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ব্যয় পর্যালোচনার জন্য গঠিত কমিটির মতামত জানা জরুরি, কারণ এটি শুধু অর্থনৈতিক নয়—কূটনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ও।
৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই পাতাল মেট্রোরেল প্রকল্পে ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ এবং ১১ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার উড়ালপথ থাকবে। মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, যার মধ্যে জাইকার অর্থায়ন ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি এবং সরকারের অংশ ১৩ হাজার ১১১ কোটি টাকা।
প্রকল্পের প্রস্তুতি শুরু হয় ২০১৯ সালে, তখন ভূমি অধিগ্রহণ, জরিপ ও নকশার কাজ সম্পন্ন করা হয়। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ৯৩ একর জমিতে ডিপো নির্মাণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন
