শনিবার
০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শনিবার
০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশি রোগীদের নতুন গন্তব্য তুরস্ক

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১১:২৬ এএম
expand
বাংলাদেশি রোগীদের নতুন গন্তব্য তুরস্ক

বাংলাদেশি রোগীদের বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার প্রবণতা নতুন নয়। বহু বছর ধরে ভারত ছিল তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির পরিস্থিতি পরিবর্তনের পর সেখানে রোগী যাওয়া উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এখন থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, চীন, মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবের পাশাপাশি নতুনভাবে তালিকায় যুক্ত হয়েছে তুরস্ক।

বন্ধ্যত্ব চিকিৎসা, কিডনি ও লিভার প্রতিস্থাপন, হৃদরোগ এবং হাড়-জোড় সংক্রান্ত জটিল চিকিৎসার জন্য এখন অনেক বাংলাদেশি যাচ্ছেন তুরস্কের দুটি খ্যাতনামা হাসপাতালে।

তথ্য অনুযায়ী, দেশে পর্যাপ্ত অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও মানসম্মত চিকিৎসা না পাওয়ায় প্রতি বছর ১০ লাখেরও বেশি রোগী বিদেশে চিকিৎসা নিতে যান। এর মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ যান কিডনি-লিভার প্রতিস্থাপন, ক্যানসার, হৃদরোগ বা বন্ধ্যত্বজনিত সমস্যার চিকিৎসায়। দেশে সরকারি পর্যায়ে বন্ধ্যত্ব চিকিৎসার কোনো বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান নেই। যদিও গত কয়েক বছরে ২৫টির মতো আইভিএফ (ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) সেন্টার গড়ে উঠেছে, তবুও রোগীরা অধিক আস্থার জন্য বিদেশমুখী হচ্ছেন। এবার তাদের পছন্দের দেশ তুরস্ক।

দীর্ঘদিন কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন সাব্বির সরকার (ছদ্মনাম)। দেশের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়মিত ডায়ালাইসিস নিলেও প্রতিস্থাপনের বিষয়ে আস্থা পাননি। প্রথমে পাকিস্তানে চিকিৎসা শুরু হলেও ইনফেকশনের ঝুঁকি বেশি থাকায় পরবর্তীতে নেওয়া হয় তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থিত ওকান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে। সেখানে চলতি বছরের জুনে তার সফলভাবে কিডনি প্রতিস্থাপন সম্পন্ন হয়।

সাব্বির সরকারের ছেলে রোম্মান জানান, দেশের হাসপাতালগুলোতে জ্বরের মতো সাধারণ রোগ নিয়েও রোগীদের ঘুরতে হয় একাধিক জায়গায়, প্রয়োজনের অতিরিক্ত পরীক্ষা দিতে হয়। চিকিৎসকদের আচরণ ও সার্বিক ব্যবস্থাপনাও অনেক সময় রোগীর পক্ষে অনুকূল নয়। তাই পরিবারটি তুরস্কে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়।

রোম্মান বলেন, তুরস্কের হাসপাতালগুলো ইউরোপীয় মানের। সেবার মান অসাধারণ, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অত্যন্ত শক্তিশালী। কিডনি প্রতিস্থাপনের পর বাবা ও দাতা দুজনই দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।”

তার ভাষায়, “চিকিৎসা ও থাকা-খাওয়াসহ পুরো প্রক্রিয়ায় ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৫ লাখ টাকা। তাদের চিকিৎসা সেবার মানের তুলনায় এটি খুব বেশি নয়। পরবর্তীতে প্রয়োজন হলে ভিডিও কলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়।

বাংলাদেশি রোগীদের জন্য তুরস্ক সরকার অনুমোদিত একমাত্র মেডিকেল ট্যুরিজম প্রতিষ্ঠান টার্কিশডক চিকিৎসা সমন্বয়ের কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৩ সালে কার্যক্রম শুরু করে এবং এখন পর্যন্ত শতাধিক রোগীকে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছে। গত এক বছরে তুরস্কগামী রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ছয়গুণ।

তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশিদের অধিকাংশই ইস্তাম্বুলের ওকান ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল ও মেডিকানা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোগীদের ৭০ শতাংশ লিভার ও কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য যাচ্ছেন, বাকিরা বন্ধ্যত্ব চিকিৎসায়। সেখানে ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট চালু থাকায় এবং দাতা হিসেবে রক্তের সম্পর্ক বাধ্যতামূলক না হওয়ায় জটিল চিকিৎসা তুলনামূলক সহজ হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির কান্ট্রি হেড এম নুরুজ্জামান রাজু জানান, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক মিল থাকায় রোগীরা সেখানে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারেন। আমাদের দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নতি করছে, কিন্তু লিভার ও কিডনি প্রতিস্থাপন এখনো কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছায়নি।

তিনি আরও বলেন, তুরস্কের চিকিৎসা প্রযুক্তি অত্যাধুনিক। তাদের হাসপাতালে সংক্রমণ হার প্রায় শূন্য। সফলতার হারও উল্লেখযোগ্য—লিভার ও কিডনি প্রতিস্থাপনে সফলতা ৯৯ শতাংশ, মৃত্যুহার সর্বোচ্চ ১ শতাংশের নিচে। তারা ক্লোজ ল্যাপারোস্কপি সার্জারি করেন, ফলে রোগীরা দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।

নুরুজ্জামান রাজুর মতে, সিঙ্গাপুরের তুলনায় তুরস্কে একই মানের চিকিৎসা ১০–১৫ শতাংশ কম খরচে পাওয়া যায়।

বন্ধ্যত্ব চিকিৎসায় (থাকা, খাওয়া, যাতায়াতসহ) খরচ হয় ৮–১০ লাখ টাকা

লিভার প্রতিস্থাপনে ৪০–৬৫ হাজার ডলার

কিডনি প্রতিস্থাপনে ২০–২৫ হাজার ডলার

বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টে ৬২ হাজার থেকে ১ লাখ ডলার

তুরস্কে বন্ধ্যত্ব চিকিৎসা সম্পূর্ণভাবে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক পরিচালিত হয়। স্বামী-স্ত্রীর নিজস্ব স্পার্ম ও ডিম্বাণু ব্যবহার করেই প্রজনন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।

ফলোআপ ও চিকিৎসা প্রক্রিয়া

রোগীদের পরবর্তী পর্যবেক্ষণে (ফলোআপ) চিকিৎসককে বাংলাদেশে এনে পরামর্শ দেওয়া হয়, যাতে রোগীর অতিরিক্ত খরচ না হয়। কেউ চিকিৎসা নিতে চাইলে তার চিকিৎসার ইতিহাস পাঠিয়ে তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে প্রক্রিয়াটি তুরস্কের চিকিৎসকরা মূল্যায়ন করেন। সম্মতি পাওয়ার পর শুরু হয় ভিসা প্রক্রিয়া, যা সাধারণত ২১ থেকে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে সম্পন্ন হয়। গুরুতর রোগীর ক্ষেত্রে দ্রুত ভিসা প্রদানের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে।

সূত্র, আমার দেশ

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন