

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করার জন্য বাংলাদেশে ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।
‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট, ১৯৭৩’ আইনের অধীনে এই ট্রাইব্যুনালে আসামি গ্রেফতার, বিচার ও সাজা দেওয়া হয়।
সময়ের বিবর্তনে এই আইনে সংশোধনী এনে বেশ কিছু ধারা সংযোজন ও বিয়োজন করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে।
এই আইনের ২০ ধারায় দণ্ড সম্পর্কে বলা হয়েছে- অভিযুক্ত ব্যক্তির দোষী সাব্যস্ত হওয়া বা নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার কারণ ট্রাইব্যুনালের রায়ে উল্লেখ করতে হবে।
ট্রাইব্যুনাল আইনে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তার অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড বা অন্য যে কোনো শাস্তি দিতে পারবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামীম বিবিসি বাংলাকে বলেন, আসামির অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বা অপরাধের গভীরতা অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল যে কোনো শাস্তি দিতে পারে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন বা আমৃত্যু কারাদণ্ড, কিংবা এর চেয়ে কম মেয়াদের সাজাও দিতে পারে।
শেখ হাসিনার মামলায় প্রসিকিউশন সর্বোচ্চ সাজা চেয়েছে
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সর্বোচ্চ শাস্তি আদালতের কাছে প্রার্থনা করেছি। আদালত তার সুবিবেচনা প্রয়োগ করবেন এবং আমাদের পক্ষ থেকে অনুরোধ হচ্ছে এই অপরাধের দায়ে আসামিদের যেন সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়।
গণঅভ্যুত্থানের আগে শেখ হাসিনার শাসনামলে এই ট্রাইব্যুনালের কয়েকটি রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর কীভাবে তা কার্যকর করা হবে, সেটিও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছিল।
গাজী এমএইচ তামীম বলেন, মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পরে আবার বলা হয়েছিল যেন ফায়ারিং স্কোয়াডে এক্সিকিউট করা হয়। এরকম কিছু রায় এই ট্রাইব্যুনালে ইতিপূর্বেও আছে। সেটা অপরাধের গভীরতা বোঝাতে গিয়ে বিচারকরা উল্লেখ করেছিলেন।
তবে গণঅভ্যুত্থানের পরে পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হিসেবে মি. তামীম এখনো এ ধরনের কোনো আবেদন করেননি বলে জানান।
অপরাধের গভীরতার ওপর নির্ভর করে মৃত্যুদণ্ড বা বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড দেওয়ার বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের এখতিয়ার বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এই আইনে একটি সংশোধনী এনে আসামির সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
এই সংশোধনীর ফলে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ট্রাইব্যুনাল তার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিতে পারবে।
একইসঙ্গে, ওই সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত বা ভুক্তভোগী কিংবা তার পরিবারকে দেওয়ার নির্দেশও দিতে পারবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউটর তামীম জানান, তারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলায় সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়ার আবেদন করেছেন।
এছাড়া এই আইনে কোনো রাজনৈতিক দল, অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিচার করার এখতিয়ার থাকলেও সাজার বিধান ছিল না।
অন্তর্বর্তী সরকার গত ১০ মে ওই আইনে দণ্ড বা সাজার বিধান যুক্ত করে সংশোধনী এনে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
ওই সংশোধনীর ফলে ট্রাইব্যুনাল এখন সংগঠনের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা, কার্যক্রম স্থগিত, নিষিদ্ধ বা সাময়িক নিষিদ্ধসহ নানা ধরনের শাস্তি দিতে পারবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করে জারি করা অধ্যাদেশে বলা হয়েছে- এই আইন বা প্রযোজ্য অন্যান্য আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, যদি ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রতীয়মান হয় যে কোনো সংগঠন এই আইনের ৩ ধারার উপধারা (২)-এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেছে, আদেশ দিয়েছে, চেষ্টা করেছে, সহায়তা করেছে, উসকানি দিয়েছে, মদদ দিয়েছে, ষড়যন্ত্র করেছে, সহযোগিতা করেছে অথবা অন্য যেকোনোভাবে সেই অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেছে, তবে ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা থাকবে সংগঠনটির কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করার, সংগঠন নিষিদ্ধ ঘোষণার, এর নিবন্ধন বা লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল করার এবং এর সম্পত্তি জব্দ করার।
একইসঙ্গে আইনে ‘সংগঠন’ শব্দটির সংজ্ঞায়ন করা হয়েছে- এই আইনের আওতায় সংগঠন বলতে যে কোনো রাজনৈতিক দলকেও বোঝাবে। পাশাপাশি দলের অধীনস্থ, সম্পর্কিত বা সংশ্লিষ্ট কোনো সংগঠন বা গোষ্ঠীকেও বোঝাবে।
বাংলাদেশের জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়ায় এই আইন সম্পর্কে বলা হয়েছে, এটি যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত একটি রাষ্ট্রীয় আইন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা এবং তাদের সহযোগী রাজাকার বাহিনী বাংলাদেশের জনগণের প্রতি যে নৃশংসতা চালিয়েছিল, তার বিচারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ এই আইন প্রণয়ন করে।
বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, এই আইনই বিশ্বের ইতিহাসে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রণীত সর্বপ্রথম যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত আইন, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত সংক্রান্ত রোম সনদেরও আগে প্রণীত হয়েছিল।
১৯৭৩ সালের এই আইন বাংলাদেশ কোলাবরেটর (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) অর্ডার ১৯৭২-কে প্রতিস্থাপিত করেছে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে গত বছর গণঅভ্যুত্থানের পর এই আইনে সংশোধনী এনে পুনর্গঠন করা হয় ট্রাইব্যুনাল।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
মন্তব্য করুন
