

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


মাটি ও ফসলের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জৈব সার ব্যবহারে ভর্তুকি ও প্রণোদনা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন কৃষি বিশেষজ্ঞ ও নীতি-নির্ধারকেরা। সরকারের উচিত দ্রুত এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে একশনএইড বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)-এর যৌথ আয়োজনে ও আরও ২৯টি সহ-আয়োজক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ‘মাটি ও ফসলের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জৈব সারে ভর্তুকি’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এই দাবি জানান।
এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, “আমরা জৈব সার নিয়ে নতুনভাবে ভাবছি এবং সমন্বিত পদ্ধতিতে কীভাবে বিনিয়োগ করা যায়, তার একটি রোড ম্যাপ তৈরির কাজ চলছে।”
খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং বাস্তব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা আমাদের সবার সম্মিলিত দায়িত্ব উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “২০৫০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ চলছে, যেখানে মন্ত্রণালয়সহ সব অংশীজন বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে সমন্বিতভাবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।"
সচিব জানান, বর্তমানে মোট কৃষি বাজেটের ৭০ শতাংশ ভর্তুকি খাতে ব্যবহৃত হয়, যার প্রায় ৮০ শতাংশই রাসায়নিক সারের জন্য ব্যয় করা হয়। সরকার রাসায়নিক সারের ব্যবহার ৩২-৩৫ শতাংশ হ্রাস এবং জৈব সারের ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। তবে অপব্যবহার রোধ ও ভারসাম্য বজায় রাখতে নিবন্ধন ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা শক্তিশালী রাখা হবে।
বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ ও চ্যালেঞ্জ আলোচনায় প্রতি টন জৈব সারের জন্য ৫,০০০ টাকা প্রণোদনা, বিনিয়োগ বা ভর্তুকি দেওয়ার সুপারিশ করেন বারির সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার ড. নাজিম উদ্দিন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের কৃষি খাত গত পাঁচ দশকে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও তা মূলত রাসায়নিক উপকরণের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় মাটির অবক্ষয়, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, ভূগর্ভস্থ পানির ঘাটতি এবং খাদ্যের পুষ্টিগুণ হ্রাস পেয়েছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো দীর্ঘমেয়াদে কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তার স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করছে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে জৈব সারের চাহিদা ৬০-৬৫ লাখ টন। এই সার উৎপাদনের জন্য দেশে ৭৫ শতাংশের বেশি কাঁচামাল রয়েছে। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হলে শতভাগ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
ড. নাজিম উদ্দিনের মতে, এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে গ্রামীণ তরুণ উদ্যোক্তাদের সংগঠিত করে দেশে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার কৃষি ব্লকে ৩.৭ লাখ নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ সেক্টরেরও উন্নতি সাধিত হবে, যা গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে এবং অভিবাসনের হার কমাতে সাহায্য করবে। এ পদক্ষেপ ২০৫০ সালের মধ্যে মাটি ব্যবস্থাপনায় বৈশ্বিক ‘নেট জিরো’ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ইতিবাচক অবদান রাখবে।
বাংলাদেশ মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই)-এর মহাপরিচালক ড. সামিয়া সুলাতানা গুরুত্বারোপ করে বলেন, “মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জৈব সারের কোনো বিকল্প নেই। মাটি ও কৃষিকে বাঁচাতে রাসায়নিক সারের পাশাপাশি জৈব সার উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহারে অধিক গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।”
বক্তারা কৃষিতে যুব ও নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে জৈব উপকরণভিত্তিক উদ্যোগগুলোকে উৎসাহিত করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি তাঁরা কৃষিবান্ধব পরিবেশ চর্চায় গবেষণা ও উদ্ভাবন জোরদার করা, সচেতনতা ও সম্প্রসারণ সেবা বাড়ানো এবং সরকারি, বেসরকারি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দৃঢ় সমন্বয় তৈরির ওপর জোর দেন।
একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবিরের সঞ্চালনায় গোলটেবিল আয়োজনে আরও বক্তব্য দেন ড. শহিদুল ইসলাম (সাবেক মহাপরিচালক, বারি), রেজাউল করিম সিদ্দিক রানা (সাধারণ সম্পাদক, বি-সেইফ ফাউন্ডেশন), ড. লতিফুল বারী (প্রধান বিজ্ঞানী, সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন সায়েন্সেস), ড. মনোয়ার করিম খান (সয়েল সায়েন্স সোসাইটি) এবং ফজলে রাব্বী সাদেক (উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন - পিকেএসএফ)।
মন্তব্য করুন
