

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হারে গত বছর দেশ সেরা হয়েছিল সিলেট। এবার রীতিমতো ভূমিধস বিপর্যয়। দেশে নয়টি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সিলেট এবার নেমে গেছে ষষ্ঠতে। এবার পাশের হার ৫১ দশমিক ৮৬ শতাংশে, যা গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতেও বিপর্যয়, গত বছর ৬ হাজার ৬৯৮ সেখানে এবার এসেছে মাত্র ১ হাজার ৬০২টি। তবে পাশের হারে এবারও যথারীতি মেয়েরা এগিয়ে। যদিও বিভাগভিত্তিক ফলাফলে বিজ্ঞান বিভাগে ছেলেরা এগিয়ে।
সিলেট শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৫১ দশমিক ৮৬ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় ৩৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ কম।
২০২৪ সালে পাসের হার ছিল ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ, যা সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। পাসের হারের পাশাপাশি জিপি-৫ প্রাপ্তিতেও বিপর্যয় হয়েছে। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ৬০২ জন। ২০২৪ সালে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬ হাজার ৬৯৮ জন।
শতভাগ পাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে। এবার পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৩২৩টি কলেজের মধ্যে মাত্র ৩টি কলেজ শতভাগ পাসের গৌরব অর্জন করেছে। গত বছর সে সংখ্যা ছিল ৮টি। আর কেউ উত্তীর্ণ হতে পারেননি চারটি প্রতিষ্ঠানে।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ১০টায় সিলেট শিক্ষা বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে ফলাফল ঘোষণা করেন সিলেট শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী।
এ সময় বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সিলেট শিক্ষাবোর্ডে এবার ৬৯ হাজার ১৭২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ৩৫ হাজার ৮৭১ জন। পাসের হার ৫১ দশমিক ৮৬ শতাংশ। তার মধ্যে ১৩ হাজার ৮৭০ জন ছাত্র ও ২২ হাজার ১ জন ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৬০২ জন। এর মধ্যে ৬৮১ জন ছেলে ও ৯২১ জন মেয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চার জেলার মধ্যে ফলাফলে আগের ধারা বজায় রেখে যথারীতি শীর্ষে সিলেট জেলা। জেলায় পাশের হার ৫৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এরপরই এগিয়ে থাকা হবিগঞ্জে জেলায় পাসের হার ৪৬ দশমিক ৭০ শতাংশ। এরপর যথাক্রমে তৃতীয় হওয়া সুনামগঞ্জে পাসের হার ৪৫ দশমিক ৯৯ এবং মৌলভীবাজারে পাসের হার ৪৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতেও এগিয়ে সিলেট জেলা। এবার জেলায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ২০৮ জন। এরপরই আছে মৌলভীবাজার জেলা। সেখানে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৯৯ জন। এরপর যথাক্রমে হবিগঞ্জ জেলায় ১৩৫টি এবং সুনামগঞ্জ জেলায় ৬০টি জিপিএ-৫ এসেছে।
ভালো ফলাফলে বিগত কয়েক বছরের ধারা ধরে রেখে এবারও ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে মেয়েরা। এ বছর মেয়েদের পাসের হার ৫৩ দশমিক ১৩ এবং ছেলেদের পাশের হার ৪৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দৌড়েও মেয়েরা এগিয়ে। ৯২১ জন মেয়ে এবং ৬৮১ জন ছেলে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
বিভাগ বিবেচনায় এবার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে। এ বিভাগে ৭৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। এরপরই দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৫০ দশমিক ১৪ শতাংশ। তৃতীয়তে থাকা মানবিক বিভাগে পাসের হার ৪৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিভাগওয়ারি জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান বিভাগে ছেলেরা এবার এগিয়ে থাকলেও বাকি দুই বিভাগে মেয়েরা এগিয়ে। বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ এসেছে ১ হাজার ৩৭৯টি। এর মধ্যে ৭৫১ জন মেয়ে এবং ৬২৮ জন ছেলে জিপিএ-৫ পেয়েছে। মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ এসেছে ১৫৩টি। এর মধ্যে ১২২ জন মেয়ে এবং ৩১ জন ছেলে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ব্যবসায়ে শিক্ষা বিভাগে জিপিএ-৫ এসেছে ৭০টি। এর মধ্যে ৪৮টি মেয়েরা এবং ২২ জন ছেলে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
ফলাফল ঘোষণা শেষে সিলেট শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৫ বছর করোনা মহামারি, বন্যা পরিস্থিতি, ছাত্র আন্দোলনের কারণে পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে পরীক্ষা হয়নি। এবার পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে পরীক্ষা ও ইংরেজি বিষয়ে অকৃতকার্য বেশি হওয়ায় প্রভাব পড়েছে ফলাফলে। এ ছাড়া কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত না হওয়াও পাসের হার কম হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ।’
তিনি আরো বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তীসময়ে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত না হওয়া ও দুর্গম হাওরাঞ্চল ও গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ইংরেজি ও বিজ্ঞান বিভাগের বিভিন্ন বিষয়ে মানসম্পন্ন শিক্ষক না থাকায়ও সার্বিক ফলাফলে প্রভাব পড়েছে।’
মন্তব্য করুন

