বৃহস্পতিবার
৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বৃহস্পতিবার
৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যশোর বোর্ডে ২০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করেনি

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৫৯ পিএম
যশোর বোর্ড
expand
যশোর বোর্ড

যশোর শিক্ষাবোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় উদ্বেগজনক ফলাফল এসেছে। বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেনি, আর শতভাগ পাস করেছে মাত্র ৫টি প্রতিষ্ঠান।

বৃহস্পতিবার সকালে যশোর বোর্ডের প্রশাসনিক ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. আব্দুল মতিন এ তথ্য জানিয়েছেন।

চলতি বছর যশোর বোর্ডে পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৫০.২০ শতাংশ। মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ১২ হাজার ৫৭৪ জন, যার মধ্যে পাস করেছে ৫৬ হাজার ৫০৯ জন।

এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৯৯৫ জন, যা গতবারের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। ২০২৪ সালে পাসের হার ছিল ৬৪.২৯ শতাংশ, আর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৯ হাজার ৭৪৯ জন শিক্ষার্থী।

যশোর বোর্ডের অধীনে ১০টি জেলা থেকে ৫৭৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।

বোর্ড কর্মকর্তাদের মতে, ইংরেজি বিষয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়াই পাসের হার কমে যাওয়ার মূল কারণ। ওই বিষয়ে পাসের হার মাত্র ৫৪.৮২ শতাংশ, অর্থাৎ অর্ধেক শিক্ষার্থীই ফেল করেছে।

এছাড়া এবারের পরীক্ষায় অনৈতিক সুবিধা, ভেন্যু-কেন্দ্র নির্ভরতা বা রাজনৈতিক প্রভাব বন্ধ থাকায় প্রকৃত মেধার প্রতিফলন ঘটেছে বলে জানান বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক।

তিনি বলেন, আমরা ৪৫টি ভেন্যুকেন্দ্র মূল কেন্দ্রে একীভূত করেছি। এতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা আর নিজেদের শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতে পারেননি। এ কারণেই বাস্তব ফলাফল প্রতিফলিত হয়েছে।”

যশোর বোর্ডের অধীনে ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে।

এসব প্রতিষ্ঠান হলো-ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ (৪৮ জন পরীক্ষার্থী), যশোরের কেশবপুর মুক্তিযোদ্ধা মহাবিদ্যালয় (৪ জন), সাতক্ষীরার আশাশুনী বুধহাটা মহিলা কলেজ (১ জন), খুলনার ফুলতলা মিলিটারি কলেজিয়েট স্কুল (৯৪ জন), খুলনা নেভি অ্যাঙ্করেজ স্কুল অ্যান্ড কলেজ (৫১ জন)।

বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাস করেনি।

এর মধ্যে, যশোর জেলা (৪টি): বাঁকড়া হাজিরবাগ আইডিয়াল গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ (৭ জন), মাড়ুয়া ইউসুফ খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ (২৬ জন),শ্রীধরপুর ইউনিয়ন কলেজ (৭ জন),বুড়ুলি স্কুল অ্যান্ড কলেজ (১০ জন)

খুলনা জেলা (৪টি): ডুমুরিয়া মডেল মহিলা কলেজ (১ জন), হোম ইকনোমিকস কলেজ (১ জন), কপিলমুনি সঞ্চারী বিদ্যা মন্দির (৫ জন), আদর্শ শিক্ষা নিকেতন, তেরখাদা (৮ জন)

মাগুরা জেলা (৪টি): বুজরুক শ্রীকুণ্ডি কলেজ (৮ জন), রাউতাড়া এইচএন স্কুল অ্যান্ড কলেজ (৪ জন), কানাইনগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট (৯ জন), বীরেন শিকদার আইডিয়াল কলেজ (১১ জন)।

সাতক্ষীরা জেলা (৩টি): ইসলামিয়া মহিলা কলেজ (৯ জন), আখড়াখোলা আইডিয়াল কলেজ (৭ জন), সাতক্ষীরা কমার্স কলেজ (২ জন)

অন্যান্য জেলা: গাংনী বিএন কলেজ, মেহেরপুর (১১ জন), সিঙ্গোর গোপালপুর কলেজ, বাগেরহাট (১৮ জন) , আলহাজ এ. গণি কলেজ, কুষ্টিয়া (৪ জন), মুনুরিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঝিনাইদহ (১৫ জন), মাকরাইল করিম খালেক সোলায়মান ইনস্টিটিউট, নড়াইল (৩৫ জন)।

এমন ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে বোর্ড কর্তৃপক্ষ ২০টি প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের আগামী সপ্তাহে ব্যাখ্যা দিতে তলব করেছে।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. আব্দুল মতিন বলেন, বিগত বছরগুলিতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে পাসের হার কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হয়েছিল। এবার আমরা সেই প্রবণতা রোধ করেছি। যে প্রতিষ্ঠানগুলো শূন্য পেয়েছে, তাদের কাছ থেকে কারণ জানতে চাওয়া হবে। সন্তোষজনক জবাব না পেলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার সকালে যশোর শিক্ষাবোর্ডের প্রশাসনিক ভবনের মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোছাম্মৎ আসমা বেগম ফলাফল ঘোষণা করেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন বোর্ড সচিব প্রফেসর মাহবুবুল ইসলাম, কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর তৌহিদুজ্জামান এবং সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট জাহাঙ্গীর কবির প্রমুখ।

যশোর শিক্ষাবোর্ডে এবার ফলাফল আগের বছরের তুলনায় হতাশাজনক। পাসের হার অর্ধেকে নেমে আসা ও ২০টি প্রতিষ্ঠানে শূন্য পাস-শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়নে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে সংশ্লিষ্টদের।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন