মঙ্গলবার
২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মঙ্গলবার
২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জকসু নির্বাচন: ছাত্রদলের আচরণবিধিভঙ্গ নিয়ে অভিযোগ জানালেন তিন প্রার্থী 

জবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৩ পিএম
প্রার্থীদের অভিযোগ
expand
প্রার্থীদের অভিযোগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে শিক্ষকসহ একাধিক প্রার্থীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, কিছু শিক্ষক নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন, আবার বেশ কয়েকজন প্রার্থী নিয়ম ভেঙে উন্নয়ন সামগ্রী ও খাবার বিতরণ করছেন। কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ্যে নিয়ম ভঙ্গের ঘোষণা দিয়ে কার্যক্রমও চালাচ্ছেন। এবিষয়ে নির্বিকার হয়ে আছে নির্বাচন কমিশন। কমিশন বলছে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কনসার্টে অংশগ্রহণ ও অনুদান ঘোষণা-

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ক্যাম্পাসে একটি কনসার্টে অংশ নেন ছাত্রদল প্যানেলের জিএস প্রার্থী খাদিজাতুল কোবরা এবং সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদপ্রার্থী তাকরিম আহমেদ। মঞ্চে খাদিজাতুল কোবরা ৫০ হাজার টাকা এবং তাকরিম আহমেদ ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ৩০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেন। যা আচরণবিধির ১৭(ক) এবং (খ) লঙ্ঘন করেছে ধারায় বলা আছে, হল সংসদের প্রার্থী সর্বোচ্চ ৫,০০০ টাকা, কেন্দ্রীয় সংসদের প্রার্থী সর্বোচ্চ ১৫,০০০ টাকা ব্যয় করতে পারবেন। এ ছাড়া ধারা ১৭(খ)-তে বলা আছে— এই সীমার অতিরিক্ত আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল বলে গণ্য হবে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সামাজিক ও কল্যানমূলক কার্যক্রম নিষেধাজ্ঞা দেয়া আছে।

খাবার বিতরণ করে আচরণবিধি লঙ্ঘন-

রোববার রাতে বাসের শিক্ষার্থীদের খাবার দেওয়ার ঘোষণা দেন প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মো. রাকিব—যা আচরণবিধির ১১(ঙ) ধারার স্পষ্ট লঙ্ঘন। পরদিন সকালে তাকে প্রকাশ্যে ছাত্রদল–সমর্থিত শিক্ষার্থীদের মাঝে খাবার বিতরণ করতে দেখা যায়। গত রাতেই তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আচরণবিধি ভাঙার ঘোষণা দিয়েছিলেন। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করলেও নির্বাচন কমিশন কোনো সুস্পষ্ট ব্যবস্থা নেয়নি।

শিক্ষকও নির্বাচনী প্রচারণার অভিযোগে অভিযুক্ত-

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পরিচালক ও ইসলামী স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক, বিএনপিপন্থী সাদা দলের সদস্য তারেক বিন আতিকের বিরুদ্ধেও আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। তিনি নির্বাচনবিধির ৬(ঙ) ধারা, যেখানে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নির্বাচনী প্রচারণা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তা লঙ্ঘন করেছেন।

ফেসবুকের এক মন্তব্যে তিনি লিখেছেন, “শিক্ষার্থীদের নিরাপদে বাড়ি পৌঁছাতে গাড়ির জন্য আবেদন করার উদ্যোগের জন্য এ কে এম রাকিব, মো আরিফুল ইসলাম ও মো আদনানকে ধন্যবাদ।” উল্লেখ্য, এই তিনজনই ছাত্রদল–সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান প্যানেলের প্রার্থী।

তবে এ বিষয়ে তারেক বিন আতিক বলেন, “আমি শুধু শিক্ষার্থী হিসেবে ওদের প্রশংসা করেছি, প্রচারণা করিনি। কমেন্ট করা কোনো নিয়ম ভঙ্গ নয়।”

অন্য প্রার্থীদের ক্ষোভ-

ছাত্র ফ্রন্ট–সমর্থিত প্যানেল ‘মওলানা ভাসানী ব্রিগেড’-এর এজিএস প্রার্থী শামসুল আলম মারুফ ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, “একেক প্যানেল একেকভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে। দুর্যোগের সুযোগ নিয়ে তারা নির্বাচনকে প্রভাবিত করছে। অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে জকসু সার্কাসে পরিণত হবে।

ঐক্যবদ্ধ জবিয়ান প্যানেলের এজিএস প্রার্থী শাহিন মিয়া লিখেছেন, “ছাত্রদল প্রতিদিন একের পর এক আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে। নির্বাচন কমিশন কি দেখে না?” জিএস প্রার্থী ফয়সাল মুরাদ লিখেছেন, “হল থেকে কনসার্ট—সবখানেই ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেল নিয়ম ভাঙছে। কমিশন কি কাঠের চশমা পরে আছে?”

ছাত্রদল-শিবিরের পক্ষ থেকে বাস সুবিধা-

ভূমিকম্প আতঙ্ক ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিভাগীয় শহর পর্যন্ত বাস সুবিধা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এদিন সাত বিভাগে ১৬ টা বাস দেয় প্রশাসন। তবে এটি চাহিদার তুলনায় কম হওয়ায় এদিন ছাত্রদল ৬টি ও ছাত্রশিবির ৭ টি বাস দেয়। নির্বাচনী আচারণ বিধিমালা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের এই বাস সুবিধা দেয়া ও আচারণ বিধিমালা লঙ্ঘনের আওতাভুক্ত। জকসুতে অংশগ্রহণকারী এই দল দুটি আচারণ বিধিমালা লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ অন্য প্রার্থীদের।

এ বিষয়ে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী একেএম রাকিব বলেন,"আজকের দিনটি শিক্ষার্থীদের হঠাৎ করে বাড়ি ফেরার জন্য মোটেই স্বাভাবিক ছিল না। আমরা একধরনের অস্বাভাবিক প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই সংকটে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে যে যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসছেন এটাই আমাদের সম্মিলিত শক্তি। আমরা আশা করি, নির্বাচন কমিশন বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নেবে।"

যা বলছে নির্বাচন কমিশন-

জকসু নির্বাচন কমিশনার সহযোগী অধ্যাপক ড. আনিসুর রহমান বলেন, “আমাদের কাছে একটি ভিডিও এসেছে। আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান বলেন, “হল থেকে অভিযোগ এসেছে। কয়েকটি ছবি পেয়েছি। তবে কেন্দ্রীয় সংসদের ক্ষেত্রে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে কমিটি তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে।”

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন