শনিবার
০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শনিবার
০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: ‘ওয়াশরুমে নামাজ পড়া প্রসঙ্গ’

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:১৭ পিএম আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:২৫ পিএম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রশিবিরের লোগো
expand
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রশিবিরের লোগো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদপ্রার্থী আলী জাকি শাহরিয়ার এক দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে নামাজ ও শিবির–বিরোধী নির্যাতনের প্রসঙ্গ তুলেছেন।

রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দেওয়া ওই পোস্টে তিনি ১৯৭৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সংঘটিত ১৭টি ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেন।

তিনি লেখেন, নামাজ আদায় করা মুসলমানের জন্য ফরজ ইবাদত। কিন্তু পরিস্থিতি যদি এতটাই প্রতিকূল হয় যে, প্রকাশ্যে নামাজ পড়া বিপজ্জনক হয়ে ওঠে, তখন বিকল্প কোনো উপায় খুঁজতে হয়। এমন অবস্থায় গোপন কক্ষ, লক করা রুম, ইশারায় কিংবা প্রয়োজনে ওয়াশরুমেও নামাজ পড়া জায়েজ হয়ে যেতে পারে।

তার মতে, নব্বইয়ের দশকে ক্যাম্পাসে এমন পরিস্থিতি ছিল, যেখানে প্রকাশ্যে নামাজ পড়লেই ছাত্রশিবির–সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে শিক্ষার্থীদের ধরে নিয়ে যাওয়া হতো, করা হতো নানান নির্যাতন।

প্রকাশ্য কার্যক্রম স্থগিত রাখার সময়টাতেও ‘নামাজী’ হলেই ছাত্ররা শিবির সন্দেহে হেনস্তার শিকার হতো।

তিনি বলেন, তখন প্রশ্ন জাগে—যে শিক্ষার্থী শুধু নামাজ পড়ার কারণে ঝুঁকির মুখে পড়বে, সে কীভাবে নিজের ধর্মীয় কর্তব্য পালন করবে? বাধ্য হয়েই কেউ ইশারায়, কেউ ওয়াশরুমে, কেউবা চুপচাপ লক করা কক্ষে নামাজ পড়েছে।

এরপর আলী জাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সময়ের নির্যাতনের ঘটনাগুলো উল্লেখ করেন।

১৯৭৮ সালের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রায় প্রথম সংঘর্ষ,

আশির দশকে মিলাদুন্নবীর অনুষ্ঠান,

১৯৮৭–৯৫ সালের মধ্যে একাধিক দফায় ছাত্রশিবিরের ওপর হামলা, হল কক্ষ ভাঙচুর,

ছাত্রদের ওপর অমানবিক নির্যাতন, এমনকি হত্যার ঘটনাও ঘটে।

তার ভাষ্যমতে, সেসময় ছাত্রদল, বাম সংগঠন ও বিভিন্ন ছাত্রশাখার সমন্বয়ে গঠিত সর্বদলীয় ঐক্যের নামে ‘শিবির উৎখাত অভিযান’ পরিচালিত হয়। এর মধ্যে কারও হাত-পা ভাঙা, ফুটন্ত পানি ঢেলে দেওয়া, বৈদ্যুতিক শক দেওয়া, এমনকি মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে ছাত্রত্ব শেষ করে দেওয়ার মতো ঘটনা ছিল।

তিনি দাবি করেন, এক সময় এই পরিস্থিতি এতটাই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে যে, শিবির সন্দেহে নামাজী ছাত্রদেরও তালিকাভুক্ত করে রাতে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হতো। ১৯৯৪ সালে নির্যাতনের শিকার হয়ে এক শিক্ষার্থী প্রাণ হারান। আবার ১৯৯৫ সালের নভেম্বর মাসে শিবির–সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ব্যাপক দমন অভিযান চালানো হয়, যেখানে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত বা বহিষ্কৃত হন।

পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৯৯–২০০০ শিক্ষাবর্ষেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে। ভর্তি পরীক্ষার সময় নতুন শিক্ষার্থীদেরও শিবির সন্দেহে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।

সবশেষে তিনি বলেন, এই ইতিহাস দেখলেই বোঝা যায় কেন অনেকে নামাজ পড়ার জন্য গোপন স্থান বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিল।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন