বুধবার
১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বুধবার
১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে জাবির ২ শিক্ষার্থীকে আহত করলো বহিরাগত গাড়িচালক

জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৭ এএম
আটককৃত প্রাইভেট কার চালক আতিকুর রহমান ও তার বন্ধু ফয়সাল আহমেদ ও সাইফুল ইসলাম
expand
আটককৃত প্রাইভেট কার চালক আতিকুর রহমান ও তার বন্ধু ফয়সাল আহমেদ ও সাইফুল ইসলাম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ক্যাম্পাস অভ্যন্তরীণ চৌরঙ্গী এলাকায় মদ্যপানরত অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে পায়ে চালিত একটি রিকশাকে চাপা দেয় একটি প্রাইভেট কার।

রিকশায় থাকা শিক্ষার্থী রিদয় দেবনাথ এবং চন্দ্রা গুরুতর আহত হন। রিকশার একটি চাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং রিকশা চালক সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হন।

এ ঘটনায় ঘটনাস্থলে থাকা কিছু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ওই প্রাইভেট কার চালক আতিকুর রহমান ও অপর দুই ব্যক্তি (তার বন্ধু) ফয়সাল আহমেদ ও সাইফুল ইসলামকে আটক করে এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে সোপর্দ করেন। গাড়ি চালানোর সময় সবাই মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন এবং এমন্তাবস্থায় আতিকুর রহমান গাড়িটি চালাচ্ছিলেন।

আহত হওয়া নারী শিক্ষার্থী চন্দ্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিভাগের ৪৫তম আবর্তনের শিক্ষার্থী এবং অপর শিক্ষার্থী রিদয় দেবনাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের ৪৪তম আবর্তনের শিক্ষার্থী।

প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাত দশটার কিছু পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌরঙ্গী এলাকায় ওই শিক্ষার্থীদ্বয় রিকশা করে যাচ্ছিলো। হঠাৎই একটা প্রাইভেট কার এসে রাস্তার মোড় ঘুরার সময় রিকশায় লাগিয়ে দিলে রিকশা উল্টে যায় এবং শিক্ষার্থীদ্বয় ও রিকশা চালক পড়ে যায়।

পরে নারী শিক্ষার্থী চন্দ্রা পায়ে আঘাত পেলে তাদের সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং পরে এনাম মেডিকেলে যেতে বলা হয়।

এদিকে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালক আতিকুর রহমান ও তার সাথে থাকা তার ২ বন্ধু ফয়সাল এবং সাইফুল এতো রাতে ক্যাম্পাস এলাকায় কিভাবে প্রবেশ করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন সবার চোখেমুখে।

এ ঘটনায় মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালক আতিকুর রহমান বলেন, আমরা ভুল করেছি। আমরা এর ক্ষতিপূরণ দিয়ে চলে যেতে চাই।

ক্যাম্পাসে এতো রাতে কেনো এবং কিভাবে প্রবেশ করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেট দিয়ে প্রবেশ করি। গেটে নিরাপত্তাকর্মী আমাদের কিছুই জিজ্ঞাসাবাদ করেনি।

ব্যক্তিজীবনে আতিকুর রহমান একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেন এবং তার বাসা সাভার ডিওএইচএস বলে উল্লেখ করেন।

ক্যাম্পাসে এতো রাতে কেনো এসেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখানে ঘুরতে আসছিলাম। সাথে থাকা তার অপর দুই বন্ধু ফয়সাল এবং সাইফুল এর বাসাও সাভার এলাকায় বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এ সময় প্রান্তিক গেটে দায়িত্বরত আনসার ও গার্ড সদস্য ছিলেন তুষার আহমেদ এবং এরশাদ আলম। তুষার আহমদ জানান, গাড়িটি গেটের কাছে আসলে দূর থেকে লাইট জ্বালানোর কারণে গাড়ির সামনে লাগানো স্টিকারটি ক্যাম্পাসের বলে মনে হয়েছিল বিধায় আর জিজ্ঞাসা না করে ভিতরে প্রবেশের জন্য গেইট খুলে দিয়েছিলাম।

দায়িত্বরত আরেক আনসার সদস্য এরশাদ আলম বলেন, আমি তখনও পর্যন্ত গেটে পৌঁছাতে পারিনি। আমার ডিউটি রাত দশটা থেকে শুরু হয়। আমি আমার বাসা থেকে যাতায়াত করি। আমি রাস্তায় জ্যামের কারণে প্রান্তিক গেটে পৌঁছাতে প্রায় সাড়ে দশটা বেজেছিল। আর এ সময়ের মধ্যে তুষার (অপর আনসার সদস্য) ভাই একাই দায়িত্বে ছিলেন।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত ওই তিনজন ব্যক্তিকে আশুলিয়া থানা পুলিশের হতে সোপর্দ করা হয়। এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার সাব ইন্সপেক্টর মাদান শাহা বলেন, আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত প্রক্টর স্যারের থেকে একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনজন ব্যক্তিকে আমাদের জিম্মিতে নিয়ে যাচ্ছি।

তাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ, তারা সকলে মদ্যপ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে গাড়ি চালিয়েছিল এবং একটি রিকশাকে ধাক্কা দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের ডোপ টেস্টের পরে এবং বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ থেকে জিডি করলে পরবর্তীতে আমরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় চৌরঙ্গী এলাকায় কিছু শিক্ষার্থী তাদের আটক করে আমাদের জানালে আমাদের টিম তাৎক্ষণিক সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদের নিয়ে আসেন। তাদের তিনজনই মাদকাসক্ত অবস্থায় ছিল এবং আমাদের ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের রিকশা চাপা দেওয়ার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা তাদের আশুলিয়া থানা পুলিশে সোপর্দ করছি এবং তার গাড়িটি আমাদের উপস্থিত শিক্ষার্থীদের দাবির ভিত্তিতে আমাদের জিম্মায় রেখেছি। পরবর্তীতে আহত হওয়া ওই শিক্ষার্থীদের এবং ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া রিকশাচালককে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিয়ে শর্ত সাপেক্ষে গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হবে।

বহিরাগত ওই ব্যক্তিগণ কিভাবে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলেন এবং এ বিষয়ে আনসার সদস্যদের গাফিলতির শাস্তি কি হবে এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বহিরাগত নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট চেষ্টা করি।

আর এই ব্যক্তি গাড়ি নিয়ে প্রান্তিক গেট দিয়ে প্রবেশ করেছিল। আমরা প্রান্তিক গেটের দায়িত্বরত গার্ডকে দায়িত্বে অবহেলার কারণে বরখাস্ত করবো এবং ক্ষতিপূরণ আদায় না হওয়া পর্যন্ত গাড়িটি আমাদের কাছে রেখে দিচ্ছি।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন