

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শেরেবাংলা হলে মধ্যরাতে জোরপূর্বক হলরুম থেকে দুই শিক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে শারীরিক হেনস্তা, মানসিক নির্যাতন এবং হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের একাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।
সোমবার (১৫ নভেম্বর) ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা পৃথকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, প্রক্টর ও হল প্রভোস্ট বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়, গত ১২ ডিসেম্বর দিবাগত রাত আনুমানিক ১টা থেকে ১টা ৩০ মিনিটের মধ্যে শেরেবাংলা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আইন বিভাগের এস. এম. ওয়াহিদুর রহমান এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল বাদশাকে হল থেকে ডেকে জোরপূর্বক ধরে নিচে নামানো হয়।
এস. এম. ওয়াহিদুর রহমান তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, তাকে হলের মূল ফটকের সামনে নিয়ে গিয়ে ঘিরে ধরে ছাত্রদলের নবনির্বাচিত সভাপতি মো. মোশাররফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান, আহসান উল্লাহ, আকিবুর রহমান, সোহানুর রহমান সিফাত, রবিন মিয়াসহ কয়েকজন অজ্ঞাতনামা নেতাকর্মী। সেখানে তার দেহ তল্লাশি করা হয় এবং হলে বৈধভাবে থাকার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। তাকে আওয়ামী লীগের আমলে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে হলে থাকার অভিযোগ এনে ‘ছাত্রলীগ ট্যাগ’ দেওয়া হয় বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, পূর্বের একটি ব্যক্তিগত বিরোধের জের ধরে রবিন মিয়া তাকে হত্যার হুমকি দেন এবং ভবিষ্যতে ‘বাঁচতে দেওয়া হবে না’ বলে ভয় দেখান। এ সময় তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয় এবং সংঘবদ্ধভাবে মানসিকভাবে হেয় করা হয়।
অন্যদিকে ফয়সাল বাদশা তার অভিযোগে জানান, একই রাতে মুক্তমঞ্চে উচ্চ শব্দে কনসার্টের প্রতিবাদ করে হলে ফেরার পর তাকে রুমের সামনে থেকে রাত ১টার দিকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগে বলা হয়, সে সময় তিনি লুঙ্গি ছাড়া অন্য কোনো পোশাক পরিহিত ছিলেন না। কাপড় পরার অনুরোধ জানালেও তাকে সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি এবং খালি গায়েই শীতের মধ্যে টেনে-হিঁচড়ে হলের নিচে নেওয়া হয়। পরে প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী তাকে শারীরিক হেনস্তা ও মানসিক নির্যাতন করা হয়।
ফয়সালের অভিযোগ অনুযায়ী, তাকে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বেঞ্চ ও গেস্টরুমে বসিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তা করা হয়। হলে বৈধ সিট নেই, অবৈধ শিক্ষার্থী এবং শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে তাকে জোরপূর্বক ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়। এমনকি খালি গায়ে ভিডিও ধারণ করে পা ধরে ক্ষমা চাওয়ানো হয় বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
দুই শিক্ষার্থীই অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, চারুকলা সংসদ আয়োজিত ‘মাঘমল্লার’ অনুষ্ঠানে গভীর রাত পর্যন্ত শব্দদূষণ নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের ক্ষোভের দায় তাদের ওপর চাপানো হয় এবং ভবিষ্যতে ছাত্রদলের নির্দেশ না মানলে ‘চরম পরিণতি’ ভোগ করতে হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।
দুই শিক্ষার্থীই অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, চারুকলা সংসদ আয়োজিত ‘মাঘমল্লার’ অনুষ্ঠানে গভীর রাত পর্যন্ত শব্দদূষণ নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের ক্ষোভের দায় তাদের ওপর চাপানো হয় এবং ভবিষ্যতে ছাত্রদলের নির্দেশ না মানলে ‘চরম পরিণতি’ ভোগ করতে হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।
অভিযুক্ত সোহানুর রহমান সিফাত এনপিবিকে বলেন, “ঐ দিন এই ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। যে অভিযোগ দিয়েছে আমার নামে, সে তো হলের আবাসিক শিক্ষার্থীই না। বর্তমান সময়ে এরকম ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাই নেই।”
আরেক অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা আহসান উল্লাহ বলেন, “আমি ওয়াহিদকে হল থেকে ডেকে জিজ্ঞেস করেছি হলে কে কে থাকে। সে যে অভিযোগ আমার নামে করেছে, এমনটির কিছুই ঘটেনি শুক্রবার রাতে।”
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল সভাপতি মোশারফ হোসেন বলেন, “আমরা সেদিন মুক্তমঞ্চের ঘটনা নিয়ে সাধারণ আলাপ-আলোচনা করেছিলাম। সেখানে অভিযোগ দেওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।”
ববি উপাচার্য ড. তৌফিক আলম বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী জানান, এসব ঘটনার পর তারা চরম আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং হলে স্বাভাবিকভাবে বসবাস ও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। তারা দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
মন্তব্য করুন
