রবিবার
১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রবিবার
১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এক বছরে খেলাপি ঋণ দ্বিগুণ: ব্যাংক খাতে উদ্বেগ

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪৩ এএম আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪৬ এএম
গ্রাফিক্স : সৌজন্য
expand
গ্রাফিক্স : সৌজন্য

দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ এক বছরে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৩৬ শতাংশ খেলাপি।

সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকায়, যেখানে এক বছর আগে একই সময়ে পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা।

এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় তিন লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা, যা দ্বিগুণেরও বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ঋণ ছিল ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮০ কোটি টাকা, যার মধ্যে খেলাপি ঋণের হার ৩৫.৭৩ শতাংশ।

ব্যাংকগুলো এই ঋণের বিপরীতে মাত্র ১ লাখ ৩০ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকার প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চয় করেছে।

প্রভিশন ঘাটতি তিন লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা, যা ব্যাংকের আমানতকারীদের জন্য বড় ঝুঁকি নির্দেশ করে।

ব্যাংক কর্মকর্তা জানাচ্ছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র লুকিয়ে রাখতে দিচ্ছে না।

বিদেশি অডিট ফার্মের মাধ্যমে কিছু ব্যাংকের তথ্য যাচাই করা হয়েছে। বিশেষত একীভূতকরণের আওতায় থাকা পাঁচটি ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের অঙ্ক বেড়েছে।

এছাড়া, এপ্রিল থেকে ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার তিন মাস পরই তা খেলাপি হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। ২০১৯ সালের আগে এই সময়কাল ছিল ছয় মাস এবং বিশেষ ক্ষেত্রে এক বছর পর্যন্ত দেওয়ার সুযোগ থাকত।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন জানান, ঋণ বৃদ্ধির এই উল্লম্ফন অস্বাভাবিক নয়।

সরকারি ব্যাংক এবং একীভূতকরণের আওতায় থাকা ব্যাংকগুলোতে বাস্তব খেলাপি ঋণের চিত্র এবার সামনে এসেছে। নতুন করে ব্যবসায়িক কারণে ঋণ খেলাপি হওয়া ততটা স্পষ্ট নয়।

তবে পরবর্তী সরকারের সময় রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার আশায় কিছু মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি হতে পারে।

ড. জাহিদ হোসেন মনে করান, নীতি সহায়তা দিয়ে খেলাপি ঋণ কমানো সম্ভব নয়। বরং ঋণ আদায়ে প্রক্রিয়ার দুর্বলতা কমাতে হবে। বিশেষত আদালতের মাধ্যমে ঋণ আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

এছাড়া, ঋণখেলাপিদের তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করাও কার্যকর হতে পারে।

সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডি আবিদুর রহমান জানান, এপ্রিল থেকে কঠোর ঋণ শ্রেণীকরণের কারণে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। কিছু বড় প্রতিষ্ঠানের ঋণও এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

তবে সব ব্যাংকেই ঋণ বৃদ্ধির প্রবণতা সমান নয়; যেমন, সাউথইস্ট ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ১৪.৮১ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশের নিচে।

ঋণের ইতিহাস পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ২০০৯ সালে দেশের খেলাপি ঋণ মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা ছিল।

২০১৪ সালের আগে পুনঃতফসিলের সুযোগ বিশেষভাবে চালু হওয়ায় ঋণ কম দেখানো হতো।

পরে নিয়মিত ঋণ পুনঃতফসিল বা নামমাত্র ডাউনপেমেন্টে ঋণ পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ লুকানো হতো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ বেড়ে ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা হয়েছে, যা মোট ঋণের ৪৪.২৬ শতাংশ।

২০২৩ সালের শেষে এটি ছিল চার লাখ ৯৭ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এক বছরে খারাপ ঋণ বেড়েছে প্রায় দুই লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা বা ৫২ শতাংশ।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি তাসকিন আহমেদ মনে করেন, খেলাপি ঋণের বৃদ্ধি শুধু আগের ঋণ লুকিয়ে রাখার কারণে হয়নি।

ঋণ খেলাপি দেখানোর সময়কাল কমানো, মহামারি, বৈশ্বিক সংকট, জ্বালানি ও ডলারের অস্থিরতা, সুদের হারের বৃদ্ধি- সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীরা কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছেন।

তিনি বলেন, সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এই সমস্যার গভীরে মনোযোগ দেওয়া উচিত। খেলাপি ঋণের অঙ্ক বড় করে দেখানো কারো উপকারে আসে না।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

X