

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


বাংলাদেশ এখন এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে আছে যখন দেশের প্রতিটি খাতের নেতৃত্ব দিতে হবে আরো বলিষ্ঠ হাতে। গতানুগতিক সাফল্যের বাইরে আমাদের প্রয়োজন ডেটাভিত্তিক, ঝুঁকি–সচেতন এবং স্বচ্ছ সিদ্ধান্ত প্রনয়ণকারী নেতৃত্ব বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এ কে এনামুল হক।
শনিবার (২২ নভেম্বর) রাজধানী ঢাকার প্রবেশদ্বার বিমানবন্দর এলাকার ইউনাইটেড কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত ৯ম লিডারশিপ সামিটে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক এনামুল হক এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, “রেজিলিয়েন্স মানে শুধু টিকে থাকা নয়, বরং এমন ব্যবস্থা গড়া যা প্রতিনিয়ত শিখতে, পরিবর্তন করতে এবং উন্নয়নের গতি ধরে রাখতে সক্ষম। আমাদের দেশের বেশিরভাগ কোম্পানির কোনো উচ্চাশা নেই। তারা অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকতে চায়। যে কারণে বৈশ্বিকভাবে কোম্পানিগুলো ভালো করতে পারছে না। এ অবস্থায় তরুণ নেতৃত্বকে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে লক্ষ্য স্থির করে চলতে হবে।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক এ কে এনামুল হক আরো বলেন, শুধু প্রবৃদ্ধি যথেষ্ট নয় — স্থিতিশীল অগ্রগতির জন্য নেতৃত্ব, প্রতিষ্ঠান ও পরিকল্পনার সমন্বিত উন্নতি জরুরি। তার মতে, উন্নয়ন টিকিয়ে রাখতে শক্তিশালী নেতৃত্ব, অর্থনৈতিক দূরদৃষ্টি এবং বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান আরও বেশি প্রয়োজন, যাতে পুঁজি দেশে থাকে এবং প্রবৃদ্ধি টেকসই হয়।
এছাড়া তিনি পরিবেশ ও নগর পরিকল্পনার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, বৈজ্ঞানিক কৃষি চর্চা, দক্ষ নগর পরিবহন ব্যবস্থা এবং ভূমির সঠিক ব্যবহার জাতীয় রেজিলিয়েন্স গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি উল্লেখ করেন, “রেজিলিয়েন্স তখনই তৈরি হয় যখন নেতৃত্ব, প্রতিষ্ঠান এবং পরিবেশ পরিকল্পিতভাবে এগোয়- প্রতিক্রিয়া হিসেবে নয়, পরিকল্পনা হিসেবে।”
কর্পোরেট নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা, সংকট মোকাবিলা ও পরিবর্তনশীল ব্যবসায়িক বাস্তবতা নিয়ে আলোচনার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের ফ্ল্যাগশিপ উদ্যোগ ৯ম লিডারশিপ সামিট অনুষ্ঠিত হয়েছে। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি–এর পরিবেশনায়, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি–বাংলাদেশ (এআইইউবি) ও ইউনাইটেড গ্রুপ–এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এবং টুয়েলভ ক্লোদিংয়ের সহযোগিতায় আয়োজিত এই সামিটে অংশ নেন দেশের শীর্ষ সি–সুইট নির্বাহী, ব্যবসায়িক পেশাজীবী, উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, ব্যবসায়িক শিক্ষাবিদ ও বিনিয়োগ এবং আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞরা।
এ বছর সম্মেলনটির প্রতিপাদ্য ছিল, “রেজিলিয়েন্ট লিডারশিপ- থ্রাইভিং অ্যামিড আনসার্টেনটি। সামিটে অংশগ্রহণকারীদের স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ শুধু অর্থনৈতিক লক্ষ্য দিয়ে নয়, বরং নির্ধারিত হবে নেতৃত্বের মানদণ্ড দিয়ে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রয়োজন দূরদর্শী, নৈতিক, পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে সক্ষম এবং সংকটে টিকে থাকার চেয়ে সুযোগ তৈরি করতে পারদর্শী এমন নেতৃত্ব। নেতৃত্বকে শুধুই কর্তৃত্ব না ভেবে দায়িত্ব ও দীর্ঘমেয়াদি মূল্য তৈরির পথে এগোনোর সময় এখনি।”
দিনব্যাপী সামিটের আলোচনা গুলো অনুষ্ঠিত হয় ৩টি কি-নোট সেশন, ৩টি প্যানেল ডিসকাশন এবং ১টি ইনসাইট সেশনের সমন্বয়ে। কিনোট আলোচনায় অধ্যাপক এ কে এনামুল হক টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক ও আর্থিক ভিত্তি নিয়ে বাস্তবসম্মত দিকনির্দেশনা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে কি-নোট স্পিকার হিসেবে বক্তব্য দেন ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে ১৫০ এর বেশি পুরস্কার পাওয়া জাপানের নাগরিক ইউসুকে তাচিকাওয়া।
শেষ কি-নোট সেশনে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুরের প্রফেসর অ্যান্ড্রু কার্ল ডেলিয়স বলেন, “পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক বাস্তবতায় উদীয়মান অর্থনীতির জন্য কোন ধরনের নেতৃত্ব কার্যকর হতে পারে, সে বিষয়ে গভীর অন্তর্দৃষ্টি রাখতে হবে।”
প্যানেল ও ইনসাইট আলোচনায় উঠে আসে—আর্থিক শৃঙ্খলা, অস্থির সময়ে নেতৃত্বের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা, এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির জন্য দৃঢ় সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলার বিভিন্ন প্রকল্প ও ব্যবহারিক দিকসমূহ। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল করপোরেট একাউন্টেবিলিটি, গভর্নেন্স, ডেটাভিত্তিক সিদ্ধান্ত, অভ্যন্তরীণ টিম রেজিলিয়েন্স এবং দায়বদ্ধ করপোরেট আচরণ বিষয়ক আলোচনাসমূহ।
সামিটের অন্যান্য সেশনে বক্তা হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন, ইউনিলিভার বাংলাদেশের সিইও রুহুল কুদ্দুস খান, বাংলালিংকের ডিজিটাল কমিউনিকেশনসের হেড জোহান বুস, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড কান্ট্রি চিফ রিস্ক অফিসার মোহাম্মদ এনামুল হক, এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের বিজয় কুমার সাহা।
এছাড়াও ছিলেন লিন্ডে বাংলাদেশের ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টর শেহজাদ মুনিম, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. সৈয়দ ফেরহাত আনোয়ার, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের স্কুল অফ বিজনেসের প্রফেসর ইমরান রহমান, ও টিম গ্রুপের ডিএমডি আব্দুল্লাহ হিল নাকিব।
মন্তব্য করুন