

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ন্যায়বিচারের পথ সাধারণ মানুষের জন্য যতই কঠিন হোক, সেই পথটিকে সহজ ও সুলভ করে তুলতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে ঠাকুরগাঁও জেলা লিগ্যাল এইড অফিস। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই সংস্থাটি ন্যায়বিচারকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছে সংস্থাটি। দীর্ঘ ২৮ বছরের পথচলায় প্রতিষ্ঠানটি যেন নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে, বিশেষ করে নতুন দায়িত্ব পাওয়া লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ) মো. মজনু মিয়ার উদ্যোগে সেবার গতি বেড়েছে বহুগুণে।
অভিযোগ গ্রহণ থেকে নিষ্পত্তি পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে এসেছে স্বচ্ছতা ও গতি। আগে যেখানে খুব কম মানুষ লিগ্যাল এইডের সেবার কথা জানতেন, এখন ইউনিয়ন থেকে জেলা শহর পর্যন্ত সচেতনতার বিস্তার ঘটেছে। নিয়মিত সভা-সেমিনার, স্থানীয় জনগণ ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে আস্থা তৈরি হয়েছে। মানুষ ক্রমেই বুঝতে পারছেন, ন্যায়বিচার পেতে আর খরচ বা জটিলতার বাধা নেই।
অফিস সূত্রে জানা গেছে, লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ) মো. মজনু মিয়া দায়ীত্ব নেয়ার পর জানুয়ারি থেকে অক্টোবর এই ১০ মাসে ৫২২ জন মানুষ পেয়েছেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যের আইনি সহায়তা। দায়ের হওয়া ৫৭৮ অভিযোগের মধ্যে ৪৪০টি নিষ্পত্তি হয়েছে মধ্যস্থতার মাধ্যমে। সরকারি খরচে মামলা দায়ের হয়েছে ১১১টি। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সমঝোতা ও মধ্যস্থতার মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের হাতে পৌঁছেছে প্রায় ৫৪ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ। বহু মানুষ জমি-বিরোধের মতো দীর্ঘদিনের সমস্যারও বাস্তবসম্মত সমাধান পেয়েছেন মাঠপর্যায়ে।
জেলার ৫টি উপজেলায় লিগ্যাল এইড কমিটি সক্রিয়ভাবে কাজ করছে, ৫৪টি ইউনিয়নেও কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে মসজিদ-মন্দির সকল জায়গায় পৌঁছে গেছে আইনি সচেতনতার বার্তা। ফলে আইনের প্রতি মানুষের যেমন আস্থা বেড়েছে, তেমনি মামলার জটও কমছে বহুগুণ।
সম্প্রতি আয়োজিত সরকারি খরচে আইনি সহায়তা বিষয়ক সেমিনারে বক্তারা জানান, অনেক মানুষের জন্য আইনি সহায়তার সবচেয়ে বড় বাধা হলো ব্যয়, জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা। লিগ্যাল এইড কার্যক্রম সেই বাধা ভেঙে বাস্তব সমাধানের পথ দেখাচ্ছে। সেখানে উপস্থাপিত একটি মানবিক ঘটনা সবার মন ছুঁয়ে যায় ৩৫ বছরের বৈবাহিক সম্পর্কে থাকা এক দম্পতির ভুল বোঝাবুঝির কারণে সন্তান থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা মায়ের কাছে মধ্যস্থতার মাধ্যমে ফেরত এসেছে সন্তানরা, কোনো খরচ ছাড়াই।
জমি-বিরোধ নিয়ে পারুল বেগম ও ইমদাদুল হকের অভিজ্ঞতাও লিগ্যাল এইডের কার্যকারিতার প্রমাণ দেয়। অফিস মাঠে নেমে সঠিকভাবে বাটোয়ারা নির্ধারণ করায় দীর্ঘদিনের ঝামেলা মিটেছে। তারা জানিয়েছেন, অবশেষে ন্যায্য প্রাপ্য পেয়ে যেন মাথার ওপরের বোঝা নেমে গেছে।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন বলেন, সরকারি খরচে লিগ্যাল এইড সাধারণ মানুষের আইনি সহায়তার সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর মাধ্যম হয়ে উঠছে। শুধু মামলা নয়, মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার মো. মজনু মিয়া জানান, তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দরিদ্র ও অসহায় মানুষকে বিনামূল্যে আইনগত সহায়তা দেওয়া। জমি-বিরোধ, পারিবারিক বিবাদ থেকে শুরু করে অনেক আপসযোগ্য ফৌজদারি মামলারও সমাধান করা হচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে নথি ও সাক্ষ্য যাচাই করে উভয় পক্ষকে বসিয়ে সমাধানে পৌঁছানোই আমাদের মূল কাজ। এতে মানুষের আইনের প্রতি বিশ্বাস বাড়ছে, বিরোধ কমছে এবং অধিকার রক্ষায় দরিদ্র মানুষও শক্ত অবস্থানে দাঁড়াতে পারছে।
তিনি আরও বলেন, ঠাকুরগাঁও লিগ্যাল এইডের এ কার্যক্রম প্রমাণ করছে ন্যায়বিচারের দরজা এখন সবার জন্য আরও উন্মুক্ত, আরও সহজ, আর মানবিক।
মন্তব্য করুন
