

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজশাহী জেলা ও মহানগর কমিটির অভ্যন্তরীণ বিরোধ এখন প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে।
জেলা আহ্বায়ক সাইফুল ইসলামকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যায়িত করে তার পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়েছেন মহানগর আহ্বায়ক মোবাশ্বের আলীর অনুসারীরা। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দানা বাধায় দলে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা।
কেন্দ্রীয় কমিটি গত ২৯ নভেম্বর সাইফুল ইসলামকে জেলা আহ্বায়কের দায়িত্ব দেয়। এর আগে তিনি ছিলেন জেলা সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী। ওই দায়িত্ব ঘোষণার পর থেকেই মহানগরের আহ্বায়ক মোবাশ্বের আলীর সঙ্গে তার দূরত্ব বাড়তে থাকে। কেন্দ্রীয় ঘোষণা পরবর্তী কয়েক দিনেই মোবাশ্বেরপন্থী নেতাদের অংশগ্রহণে একাধিক কর্মসূচি ও প্রতিবাদে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়।
সাইফুল ইসলামের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি রাজশাহীতে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানোর অভিযোগ থাকা বিতর্কিত সন্ত্রাসী রুবেলের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে পাশাপাশি বসার ভিডিও ভাইরাল হয়। এসব দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে ‘আওয়ামী দোসর’ পরিচয়ের অভিযোগ আনা হচ্ছে।
মোবাশ্বের আলীর অনুসারীরা সাইফুলের পদত্যাগের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন। পরে ১ ডিসেম্বর জেলা কমিটির পরিচিতি সভা পণ্ড করার চেষ্টা হয়। সেই দিন পাঁচজন নেতা পদত্যাগ করেন। গত বুধবার আরও পাঁচজনের পদত্যাগে দলীয় অস্থিরতা বাড়ে।
বুধবার সন্ধ্যায় মহানগর ছাত্র ও যুবশক্তি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিছু জুলাই যোদ্ধা মশাল মিছিল নিয়ে সাইফুল ইসলামের নিউরণ নার্সিং কোচিং সেন্টারে গিয়ে তালা লাগিয়ে দেন। ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়।
সড়কের দেয়ালে লিখে দেওয়া হয় ‘আওয়ামী দোসর সাইফুলের পতন চাই’। পরে তারা এনসিপির মহানগর কার্যালয়ে গিয়ে সেখানে তালা দেন। কার্যালয়ের ভেতরে তখন উপস্থিত ছিলেন মহানগর আহ্বায়ক মোবাশ্বের আলী। পরে রাতেই তালা কেটে বের হন তিনি।
রাতে নিজের বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্নভাবে আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমি এখন প্রাণসংশয়ে আছি। আমার কিছু হলে এর দায় মহানগর কমিটির নেতাদের।’
ছবির বিষয়ে তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে জানান, ‘২০১১-১২ সালের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করতে গিয়ে কয়েকজন শিল্পী ও নেতার সঙ্গে তোলা ছবি। এর সঙ্গে বর্তমান রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই।’
মোবাশ্বের আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘তিনি আমাকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন। তাঁর লোকজনই এসব করছে। নিজেরাই নিজেদের অফিসে তালা লাগিয়ে নাটক করেছে। আমরা ছোট দল এভাবে চললে সংগঠনের ক্ষতি হবে।’
অন্যদিকে নগর আহ্বায়ক মোবাশ্বের আলী বলেন, ‘সাইফুল ইসলাম চিহ্নিত আওয়ামী দোসর। তিনি কী করছেন তা কেন্দ্রকে আগেই জানিয়েছি। প্রকাশ্যে বলিনি শুধু পদমর্যাদার কারণে।’
সাইফুলের বিরুদ্ধে মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে তিনি বলেন, ‘ছেলেরা আন্দোলন করছে, আমি তাদের দাবির সঙ্গে একমত। কোনো সহিংস কিছু না করতে বলেছি। তারা আগেই জানিয়েছিল, সাইফুল পদত্যাগ না করলে কার্যালয়ে তালা দেবে। তার পরিণতিই যা ঘটেছে।’
জেলা আহ্বায়কের প্রাণনাশের আশঙ্কার বিষয়ে মোবাশ্বের বলেন,‘তাকে একটি ঢিল ছোড়া তো দূরের কথা—রুচিই হবে না আমাদের। এগুলো তার বানানো নাটক।’
এনসিপির অভ্যন্তরীণ এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে দলের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। সাইফুল ইসলাম জানাচ্ছেন, কেন্দ্র সব তথ্য-প্রমাণ পর্যবেক্ষণ করছে এবং সময়মতো সিদ্ধান্ত নেবে। অন্যদিকে মহানগর পক্ষ বলছে, জেলা আহ্বায়কের পদে এমন বিতর্কিত ব্যক্তিকে রাখলে দলের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে।
মন্তব্য করুন
