

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


অন্যান্য ফসলের চেয়ে লাভ বেশি হওয়ায় ময়মনসিংহের ভালুকায় ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কলা চাষ। বর্তমানে অনাবাদি পতিত জমি বর্গা নিয়ে কলা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন বিভিন্ন গ্রামের কলা চাষীরা। শুধু কলা বিক্রি করেই নয়, কলার চারা বিক্রি করেও আয় করছেন দ্বিগুণ।
অধিক মুনাফা পেয়ে কলা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। তবে সরকারি সাহায্য ও কৃষি বিভাগের আধুনিক প্রযুক্তিগত সহযোগিতা পেলে কলা চাষে আগ্রহী হবেন অনেক কৃষক।
বানিজ্যিকভাবে অনেক চাষী বিভিন্ন জাতের কলা চাষ করছেন, এসব গ্রামের বিভিন্ন চালায় মাটির আইলে সাড়ি সাড়ি সবুজ পাতার গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে কাদি ধরা কলার ছড়ি। আর বাগান থেকে কলার ছড়ি কেটে এনে জড়ো করছেন তারা, ঢাকায় নিয়ে বিক্রয় করার জন্য।
চলতি মৌসুমে ভালুকা উপজেলার মল্লিকবাড়ি, উথুরা, ডাকাতিয়া ও হবিরবাড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে সবরি, চাপা ও অমৃতসাগর ও জি-নাইন জাতের কলা আবাদ করেছে। স্থানীয় বাজারে বর্তমানে একটি ছড়ি ৩শ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ঢাকার তেজগাঁও আড়তে ৪শ থেকে ৪শ ৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে।
ছড়ি থেকে কলা কাদি কেটে প্রক্রিয়াজাত করে ট্রাক ভরে ঢাকার তেজগাঁও আড়তে নিয়ে পোন হিসাবে বিক্রি করেন। প্রতি পোন অর্থাৎ ২০ হালি কলা বিক্রি হয় ৪শ থেকে ৪শ ৫০ টাকা। এতে তাদের মুনাফা বেশী আসে। ফলে কৃষকেরা যেমন লাভবান হচ্ছেন। তেমনি অনুপ্রাণিত হচ্ছেন এলাকার অন্য চাষিরাও।
এদিকে, চাষীরা বলছে, সরকারি সাহায্য ও কৃষি বিভাগের আধুনিক প্রযুক্তিগত সহযোগিতা পেলে অর্থকরী ফসল হিসাবে কলা চাষ ব্যাক্তির লাভের পাশাপাশি জাতীয় ভাবে কৃষি উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
জানা যায়, কলা উপযোগি হওয়ায় চারিদিক থেকে ছড়ি কেটে বাজারজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা। ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রতিদিন ট্রাক ভরে কলা নিয়ে ঢাকার কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করছেন চাষিরা।
আবার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ফরিয়ারা এসে কৃষকের বাগান থেকে সরাসরি কলার ছড়ি কিনে নিয়ে যাচ্ছে। কলা থেকে চিপস, জ্যাম ও জেলি তৈরি করে স্থায়ীভাবে প্রসেসড পন্য উৎপাদনের মাধ্যমে উদ্যোক্তাগণ নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তৈরি করতে পারবেন।
কৃষি তথ্য অনুযায়ী, কলা চাষে উর্বর দোআঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো, যেখানে পর্যাপ্ত রোদ থাকে এবং পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা আছে। জমি ভালোভাবে তৈরি করে দুই মিটার দূরে দূরে (ষাট-গুণ, ষাট-গুণ, ষাট-গুণ) সেমি আকারের গর্ত খুঁড়তে হয়। এছাড়া সারাবছর (চরম শীত ও বর্ষাকাল ব্যতীত) কলা চাষ করা যায়। তবে বর্ষা শেষে (আশ্বিন-কার্তিক মাসে) চারা লাগালে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
কৃষি তথ্য মতে, পতিত জমিতে কলা চাষে লাভবান চাষীরা, কারণ এতে কম খরচে ভালো মুনাফা হয় এবং এর জন্য কম সার, কীটনাশক ও সেচ প্রয়োজন হয়। এই চাষের মাধ্যমে পতিত জমিকেও লাভজনক সম্পদে পরিণত করা যায়, যা কৃষকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা করে।
অধিকাংশ চাষীদের দাবি কৃষি বিভাগ যদি সহজ শর্তে প্রান্তিক চাষীদের ঋণ সহায়তা প্রদান করেন। তাহলে দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশের বাজারে কলা রপ্তানি করতে সক্ষম হবেন তারা।
কলা চাষী কিবরিয়া জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে কলা চাষ করে স্থূলভাবে সফল হয়েছেন। এ বছর এক একর জমিতে কলা আবাদ করেছেন। জমি ভাড়া, ক্ষেত তৈরি, চারা রোপণ, সার, সেচ ও শ্রমিকসহ খরচ বাবদ প্রায় ৩ লাখ টাকার মত সর্বমোট খরচ হয়েছে।
তিনি জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগবালাই না হলে খরচ বাদ দিয়ে বাজার ভালো হলে এক একর জমি হতে এ বছর পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার কলা বিক্রি করতে পারবেন। শুধু কলা বিক্রি করেই নয়, কলার চারা বিক্রি করেও আয় করছেন দ্বিগুণ।
তিনি আরও জানান, প্রতি বছর কলা উঠানো শেষ হলে পৌষ মাসে ক্ষেত তৈরি করে মাঘ মাসে কলার চারা রোপণ করে থাকেন। সেচের জন্য নিজস্ব অর্থায়নে চালায় সাবমার্সিবল নলকূপ বসিয়েছেন। ঠিক মত সেচ, সার, কীটনাশক ও পরিচর্যার জন্য শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে। কলার চারা রোপণের দশ মাস হতে এক বছরের মাথায় কলা বিক্রিয় যোগ্য হয়ে যায়। তিনি ব্যাতিত ওই গ্রামের আশপাশের গ্রামে আরও শতাধিক চাষী বানিজ্যিকভাবে কলা চাষ করে অর্থনৈতিক সাচ্ছন্দ্য এনেছেন প্রত্যেকের জীবনে।
ভালুকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জামান জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় এবার ৩শ ২০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের কলা চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে, প্রায় ১২ হাজার ৮শ মেট্রিক টন। এটি একটি লাভজনক কৃষি ফসল। তবে সরকারি প্রনোদনা পেলে অনেক চাষী কলা চাষে আগ্রহী হবেন।
মন্তব্য করুন