

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


লক্ষ্মীপুরে জেলা পরিষদ ভবনের প্রধান গেইট ও নিরাপত্তা দেওয়াল প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। সম্প্রতি গেইটটি উদ্বোধন করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোন টেন্ডার ছাড়াই সহকারী প্রকৌশলী নাজিমুল হক সরকার নিজেই ‘ঠিকাদার’ হয়ে কাজটি বাস্তবায়ন করেছেন। পরে একটি ঠিকাদারী লাইসেন্স ব্যবহার করে বিল উত্তোলন করে নেন তিনি। এছাড়া পরিষদের পুকুরের দক্ষিণ পাশে আরসিসি ঢালাইয়ের কাজও করেছেন তিনি। তবে কত টাকার কাজ বা কোন প্রতিষ্ঠান কাজ করেছে তার কোন তথ্যও দিচ্ছেন না তিনি।
এদিকে রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে একটি সংবাদ সংক্রান্ত তথ্যের জন্য সাইফুল ইসলাম নামে একজন সংবাদকর্মী জেলা পরিষদের গেটে গেলে সহকারী প্রকৌশলীর নির্দেশে তাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাকে বাধা দেওয়ার পর মোবাইলফোনে প্রকৌশলীকে কল দিই। তিনি আমাকে বলেন ‘সেনাবাহিনী যদি ভেতরে ঢুকতে না দেয়, তাহলে ঢুকতে পারবেন না’। তবে গেটে থাকা সেনা সদস্যরা আমাকে জানান, ‘তাদের পক্ষ থেকে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। ভেতর থেকেই সাংবাদিক প্রবেশে বাধা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে’।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২২ আগষ্ট নাজিমুল হক উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে জেলা পরিষদের যোগদান করেন। তখন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. শাহজাহান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার আশির্বাদপুষ্ট হয়েই অল্প দিনেই তিনি হয়ে যান ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী। এরপর থেকে উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলীর স্বাক্ষর তিনি একাই দিতে। এভাবেই ৫ বছর অতিবাহিত হয়। তবে জেলা পরিষদ তথ্য বাতায়নে দেখা যায়, ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে সহকারী প্রকৌশলীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এটি নিয়েও ‘ধোঁয়াশা’ রয়েছে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক ঠিকাদার বলেন, সহকারী প্রকৌশলী নাজিমুল হকসহ কর্মরত কয়েকজন ঠিকাদারদের লাইসেন্স ব্যবহার করে প্রকল্পের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ওই কার্যালয়ে নাজিমুলের দাপট সবচেয়ে বেশি। সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী তার কাছে জিম্মি। তিনিই প্রকৌশলী আবার তিনিই ঠিকাদার। তাদের এমন কর্মকান্ডে অসহায় হয়ে পড়েছে সাধারণ ঠিকাদাররা। জেলা পরিষদে প্রায় দুই শতাধিক ঠিকাদারের লাইসেন্স রয়েছে। বছরের পর বছর লাইসেন্স নবায়ন করলেও অনিয়মের কারণে ঠিকাদাররা কাজ পায় না।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার ও এক কর্মকর্তা বলেন, গেটের কাজের কোন টেন্ডার হয়নি। সহকারী প্রকৌশলী নিজেই কাজ করিয়েছেন। বিল উত্তোলনের জন্য ঠিকাদার বিল্লাল হোসেন বাবলুর লাইসেন্স ব্যবহার করেছেন। ২১ অক্টোবর জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার এবং জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফুন নাহার গেটটি উদ্বোধন করেন।
২১ অক্টোবর দুপুরে কার্যালয়ে গিয়ে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সহকারী প্রকৌশলী নাজিমুল হক সরকার বলেন, ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে গেইটের কাজ করা হয়েছে। এখানে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প থাকায় টেন্ডার আহবান করা হয়নি, দ্রুত সময়ে মধ্যে কাজ করতে হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মা-বাবার দোয়া এ কাজ করে। তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারীর কথা জানতে চাইলে তিনি কোনভাবেই নাম বলেননি। তিনি প্রধান নির্বাহীকে জিজ্ঞেস করার জন্য বলেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদের প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার বলেন, গেটটির কাজ কে বা কারা করেছে কাগজপত্র দেখতে হবে। সহকারী প্রকৌশলী কাজ করেছেন কিংবা বিল উত্তোলনের জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। খোঁজ নিয়ে জানতে হবে।
 সর্বশেষ খবর পেতে  Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
    
    
    সর্বশেষ খবর পেতে  Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
    
মন্তব্য করুন
