মঙ্গলবার
১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মঙ্গলবার
১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বীরপ্রতীক তারামন বিবির ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

‎ কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:২০ পিএম
‎বীরপ্রতীক তারামন বিবি
expand
‎বীরপ্রতীক তারামন বিবি

‎বীরপ্রতীক তারামন বিবির ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলা সদরের কাচারীপাড়ায় নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধা।

শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহজনিত অসুস্থতায় ভোগার পর ৬১ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার নিজ বাড়িতেই তাকে সমাহিত করা হয়। ‎ ‎মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে ‘বীরপ্রতীক’ খেতাব দেওয়া হলেও দীর্ঘ ২৫ বছর তিনি জানতেই পারেননি এই সম্মানের কথা।

১৯৯৫ সালের শেষ দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ঢাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে বীরপ্রতীক পদক তুলে দেন। দেশের ইতিহাসে বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মাত্র দু’জন নারীর মধ্যে একজন ছিলেন তারামন বিবি। ‎ ‎১৯৫৭ সালে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার শংকর মাধবপুর গ্রামে জন্ম নেওয়া তারামন বিবির শৈশব-কৈশোর ছিল দারিদ্র্য ও সংগ্রামে পরিপূর্ণ। সাত ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় তিনি। লেখাপড়ার সুযোগ না পেয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। ঠিক সেই সময়েই ১৯৭১ সালে মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। ‎ ‎প্রথমদিকে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে রান্না করতেন, তাদের জন্য খাবার যোগান দিতেন, অস্ত্র লুকিয়ে রাখতেন এবং পাকিস্তানি বাহিনীর খবর সংগ্রহ করতেন তিনি।

ধীরে ধীরে রান্নার খুন্তির পাশাপাশি রাইফেল চালানোও শেখেন। পরবর্তীতে সম্মুখসমরে অংশ নিয়ে সত্যিকারের এক সংগ্রামী যোদ্ধায় রূপ নেন তারামন বিবি। ‎ ‎১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তার অসীম সাহসিকতা ও অবদানের জন্য তাকে ‘বীরপ্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করেন।

কিন্তু দারিদ্র্য আর প্রত্যন্ত এলাকার কারণে অনেক বছর তার প্রকৃত পরিচয় অজানাই থেকে যায়। অবশেষে ১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজের অধ্যাপক ও গবেষক বিমল কান্তি দেয়।

কুড়িগ্রামের অধ্যাপক আবদুস সবুর ফারুকীর সহযোগিতায় তারামন বিবিকে খুঁজে বের করেন। এরপর ঢাকায় এনে তার পরিচয় নতুন করে দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরা হয়। ‎ ‎তারামন বিবিকে নিয়ে সাংবাদিক-লেখক আনিসুল হক রচনা করেন ‘বীর প্রতীকের খোঁজে’ নামের বই। তার জীবন সংগ্রাম অনুপ্রেরণা হয়ে উঠে আনিসুল হকের নাটক ‘করিমন বেওয়া’-এর কেন্দ্রীয় চরিত্রের প্রেরণা হিসেবেও। ‎ ‎আজ তার মৃত্যুবার্ষিকীতে কুড়িগ্রামসহ দেশজুড়ে নানা অনুষ্ঠানে তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হচ্ছে। জাতির স্বাধীনতার ইতিহাসে তারামন বিবি এক বীরকন্যা, যিনি বুকে সাহস আর অবিচল দেশপ্রেম নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

X