

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


বায়ু দূষণ আজ বিশ্বব্যাপী অন্যতম বড় পরিবেশগত ও জনস্বাস্থ্যগত বিপদ। মানুষের জীবিকা ও শহর গড়ার একাধিক কর্মকাণ্ড- বিশেষত যানবাহন, শিল্প, নির্মাণ এবং অব্যবস্থাপনা- বাতাসে ক্ষতিকর কণিকা ও গ্যাস ছাড়ায়। এই দূষণ শুধুমাত্র শ্বাসনালীসমূহকে প্রভাবিত করছে না, বরং যোগাযোগব্যবস্থা, নগর অবকাঠামো এবং সামাজিক ন্যায়বিচারকেও প্রভাব আনছে।
যখন কোনো শহরে নির্মাণ কাজের জন্য রাস্তাঘাট খোড়া হয় আর সেখানে বালু, কংক্রিট, মাটি বা অন্যান্য নির্মাণ উপকরণ সচেতনতা ছাড়াই রাস্তার ধারে বা ড্রেনের পাশে ফেলে রাখা হয়, তখন বাতাসে জমে ধুলার ঘনত্ব হঠাৎ বেড়ে যায় এবং সেই ধূলিকণা মানুষের ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারে- যা জটিল স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে এবং জীবনের গুণগতমান কমিয়ে দেয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গ্লোবাল এয়ার কোয়ালিটি এবং স্বাস্থ্যের ওপর বায়ু দূষণের প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক: প্রতিবার সূক্ষ্ম কণিকা ও অন্যান্য দূষক মানুষের প্রাণহানির অন্যতম কারণ। এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক, হাঁপানি ও দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসনালীর রোগ বাড়ায়। পরিবেশগতভাবে, এসব দূষণ জলবায়ু পরিবর্তন ও বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতিও বাড়ায়, অর্থনৈতিকভাবেও জনস্বাস্থ্য ব্যয় এবং কর্মদিবসের ক্ষতির মাধ্যমে বিশাল বোঝা সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে, এবং বিশেষভাবে খুলনায়, এই সমস্যা আরও প্রবল হয়ে উঠেছে। খুলনা সিটির ড্রেন এবং রাস্তায় চলছে ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্প। কিন্তু তা ভালোভাবে ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বা ঠিকাদাররা প্রায়ই ইট, খোয়া, বালু, মাটি এবং নির্মাণ উপকরণ ভুলভাবে রাস্তার উপর বা ড্রেনের পাশে ফেলে রেখে যায়। এমনকি রাস্তা খোলা অবস্থায় মাটি এবং ধূলিকণা গাড়ি চলাচলের সময় বাতাসে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে, যা শহরের বায়ু গুণগত মানকে খুবই নিম্নমানের করে তুলছে। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে এই ধূলার ঘনত্ব বেড়ে যায়, এবং খালিশপুর, সোনাডাঙ্গা, বয়রা ইত্যাদি এলাকায় বাসিন্দারা শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি এবং ফুসফুসের রোগে ভুগছেন।
গবেষণাও বলেছে, খুলনায় PM2.5 এবং PM10-এর গড় ঘনত্ব অনেক সময় দেশের নিরাপদ সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে এই ধুলা মানবস্বাস্থ্যে এমন ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে যে, শ্বাসনালীর রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এবং বিশেষত শিশু ও প্রবীণরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়ছেন।
এই দুর্গতির মোকাবিলা করতে দরকার একটি সমন্বিত পরিকল্পনা। প্রথমত, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেমন খুলনা সিটি কর্পোরেশন ও পরিবেশ বিভাগকে নির্মাণ কাজ পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ঠিকাদার দিক নির্দেশনায় বাধ্য করা উচিত যেন তারা নির্মাণ উপকরণ রাস্তার পাশে বা ড্রেনের পাশে ফেলে না রাখে। রাস্তার ধুলা নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিতভাবে স্প্রে এবং রাস্তা-পরিষ্কার যন্ত্র ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যের জন্য, ধূলিকণা কমাতে শহরে সবুজ অঞ্চল বৃদ্ধি কিংবা কাভারড স্টোরেজ স্থাপন করা যেতে পারে। এছাড়া, স্থানীয় বাসিন্দাদের সচেতনতা তৈরি করা জরুরি- তারা জানুক নির্মাণ ধুলা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং তাঁদেরও দায়িত্ব আছে নির্মাণ সামগ্রী নিরাপদভাবে রাখার।
সব মিলিয়ে, খুলনা জেলার বায়ু দূষণ কমানোর ক্ষেত্রে নির্মাণ ও রাস্তাঘাট ব্যবস্থাপনায় সচেতনতা আনতে পারলে জনস্বাস্থ্যে বড় ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব- যা একাধিক রোগ প্রতিরোধ এবং শহরকে আরও বাসযোগ্য করতে সাহায্য করবে।
মন্তব্য করুন