

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ব্যস্ত নগরজীবনের ক্লান্তি ভুলে মানুষ খোঁজে কিছুটা প্রশান্তি, একটু নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা। এমনই এক প্রশান্তির নীড় মেলে জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার ঝাউগড়া ইউনিয়নের শেখ সাদী ও টুপকারচর এলাকায় বিস্তৃত মনোমুগ্ধকর রৌমারি বিল।
প্রায় ৩০০ একরজুড়ে বিস্তৃত এই বিল স্থানীয়দের কাছে পরিচিত ‘গরিবের টাঙ্গুয়ার হাওর’ নামে।
কথিত আছে, একসময় এই বিলে প্রচুর রৌ মাছ পাওয়া যেত, সেখান থেকেই নাম—রৌমারি বিল। বর্ষা ও শরৎকালে যেন নতুন প্রাণ ফিরে পায় জলাভূমিটি। ঢেউয়ের মৃদু ছন্দে দুলতে থাকা স্বচ্ছ জলের উপর ভেসে ওঠে সাদা মেঘের প্রতিবিম্ব।
সূর্যের সোনালি আলো, বাতাসের শীতল ছোঁয়া আর নৌকার দোলায় সৃষ্টি হয় অপার সৌন্দর্যের এক স্বর্গীয় আবহ।
বর্ষার সময় বিল ভরে ওঠে অথৈ জলে। সারি সারি নৌকা, স্পিডবোট আর আনন্দভ্রমণে মেতে থাকা দর্শনার্থীদের কলরবে মুখরিত থাকে চারপাশ।
কেউ নৌকাভ্রমণে মগ্ন, কেউ ধারের শীতল বাতাসে হারিয়ে যান প্রশান্তির খোঁজে।
বিকেলে দেখা মেলে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, শিশুদের নৌকায় খেলা, আর বিলপাড়ের ফুচকা-চটপটির আড্ডা— সব মিলিয়ে রৌমারি বিল রূপ নেয় এক জীবন্ত উৎসবে।
শীতকালে বদলে যায় বিলের রূপ। শুকনো বিলে চাষ হয় সরিষা, তামাকসহ নানা ফসল। চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে সরিষার হলুদ রঙ, আকাশজুড়ে উড়ে বেড়ায় অতিথি পাখির ঝাঁক। প্রতিটি ঋতুতেই রৌমারি বিল সাজে নতুন রূপে, নতুন সৌন্দর্যে।
দূরদূরান্ত থেকে প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা ভিড় করেন। বিশেষ করে ছুটির দিনে এখানে উপচে পড়ে জনসমাগম।
দর্শনার্থী আমিনুল ইসলাম বলেন, “এখানে এলেই মনটা সতেজ হয়ে যায়। প্রকৃতির সৌন্দর্য অবর্ণনীয়। একটু যত্ন নিলে এটি দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হতে পারে।”
অনন্ত কুমার সরকার জানান, “জায়গাটি সত্যিই অসাধারণ! আজ ছেলে অরূপকে নিয়ে এসেছি। প্রায়ই বন্ধুবান্ধব নিয়ে আসি। সরকারি উদ্যোগে উন্নয়ন হলে পর্যটক আরও বাড়বে।”
জামালপুর শহর থেকে রৌমারি বিল যাওয়া সহজ। বাস বা ট্রেনে শহরে পৌঁছে সেখান থেকে অটোরিকশা বা সিএনজিতে ঝাউগড়া বা মানকি বাজার হয়ে সরাসরি যাওয়া যায়। জনপ্রতি ভাড়া প্রায় ৪৫-৫০ টাকা।
রৌমারি বিল কেবল একটি জলাশয় নয়—এটি প্রকৃতির কোমল ছোঁয়া, গ্রামীণ জীবনের সরল সৌন্দর্য এবং মানুষের বিনোদনের অন্যতম আশ্রয়স্থল। একবার এ বিলে এলেই মন আবারও টানে ফিরে আসার জন্য।
সঠিক পরিকল্পনা ও উন্নয়নের মাধ্যমে রৌমারি বিল দেশের পর্যটন মানচিত্রে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে—শুধু ‘গরিবের টাঙ্গুয়ার হাওর’ নয়, বরং সবার প্রিয় ভ্রমণকেন্দ্র হয়ে।
মন্তব্য করুন