বৃহস্পতিবার
৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বৃহস্পতিবার
৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চাঁদপুরে নয় মাসে সাপের কামড়ে আহত ৫৫৫জন, মৃত্যু ৩

চাঁদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:২৫ পিএম
expand
চাঁদপুরে নয় মাসে সাপের কামড়ে আহত ৫৫৫জন, মৃত্যু ৩

নদী উপকূলীয় চাঁদপুরের আট উপজেলায় চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫শ’ ৫৫জন ব্যাক্তি সাপড়ে কামড়ে আহত হয়েছেন। এর মধ্যে বিষধর সাপের কামড়ে হাইমচর উপজেলায় ১ জন ও কচুয়া উপজেলায় ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

চিকিৎসকদের মতে জেলা সদর ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনম থাকায় রোগী মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। তবে এ ক্ষেত্রে রোগীর স্বজনদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।

সম্প্রতি চাঁদপুরের সিভিল সার্জন কার্যালয় ও ২৫০ শয্যা চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল থেকে এসব তথ্য জানাগেছে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে সাপের কামড়ে সবচাইতে বেশি আহত হয়েছে মতলব উত্তর উপজেলায় ১৭০জন এবং হাজীগঞ্জ উপজেলায় ১৩১জন। তবে এই দুই উপজেলায় কোন মৃত্যু নেই।

কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানাগেছে, ওই উপজেলায় সাপে কাটা দুই ব্যাক্তি হাসপাতালে আনার আগেই মৃত্যু হয়েছে। কারণ ওই দুই ব্যাক্তির পরিবার প্রথমে ওঝার কাছে নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে ব্যার্থ হয়ে হাসপাতালে আসেন। দুই ব্যাক্তিকেই গোকরা সাপের কামড় দেয়।

কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সোহেল রানা বলেন, গ্রামে এখনো অনেক কুসংস্কার প্রচলিত। সাপে কাটলে ওঝা বা বেদের কাছে নিয়ে যান স্বচজনরা। অনেকেই সাপে কাটলে বৈজ্ঞানিক উপায়ে কীভাবে চিকিৎসা নিতে হবে বা সাপে কাটলে করণীয় কী তা জানেন না। ফলে অনেক ক্ষেত্রে রোগীর বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, শুধু সঠিক জ্ঞানের অভাবে মারা যান।

এদিকে গত ৭ অক্টোবর জেলার হাইমচর উপজেলার ঈশানবালা বাজারে দুধ বিক্রির জন্য আসা সোহেল গাজী (৩৫) নামে ব্যাক্তিকে অ্যান্টিভেনম দেয়ার পরও মৃত্যু হয়েছে।

সোহেলের স্বজনরা জানান, সাপ দংশনের প্রায় দেড়-দুই ঘণ্টা পর সোহেলকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে চিকিৎসক তাকে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করেন। তবে এর কিছুক্ষণ পরই তার মৃত্যু হয়।

এই বিষয়ে ওই সময়ে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, সোহেল নামে রোগী আনার পর মাথা সোজা রাখতে পারছিলেন না এবং চোখও খুলতে পারছিলেন না। হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম ছিল, আমরা তা দ্রুত প্রয়োগ করেছি। সাপটি অত্যন্ত বিষধর ছিল। অনেক সময় রোগীরা হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই বা দেরিতে আসার কারণে এমন মৃত্যু ঘটে।

তিনি আরো বলেন, সাপের কামড়ের পর যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে আসা জরুরি। দেরি হলে শরীরে বিষ ছড়িয়ে যায় এবং জীবন রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে।

চাঁদপুর সদর হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স সাদেক আলী বলেন, চলতি বছরে আমরা সাপে কাটা রোগীর জন্য ১৫০ ভায়াল অ্যান্টিভেনম পেয়েছি। ১২জন রোগীর মধ্যে ১২০টি বোতল প্রয়োগ করা হয়েছে। এখনো হাসপাতালে ৩০ বোতল মজুদ আছে।

চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার (এমও-সিএস) ডা. মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, উপজেলা পর্যায় থেকে প্রেরিত তথ্যে জানতে পেরেছি প্রত্যেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে অ্যান্টিভেনম মজুদ আছে। কারণ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় স্থানীয়ভাবে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় অ্যান্টিভেনম সংগ্রহ করে রাখতে হয়। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ি সদর হাসপাতাল ছাড়া বাকি ৭ উপজেলায় ১১৯ বোতল অ্যান্টিভেনম মুজদ আছে।

তিনি আরো বলেন, যত দ্রুত সম্ভব সাপে কাটা আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কারণ বিষ প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম এখন প্রত্যেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিনামূলে প্রদান করা হয়।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন