মঙ্গলবার
২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মঙ্গলবার
২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বন্যার পর যে গাছ নিজে নিজেই জন্মায়, সেটাই চরবাসীর জীবিকার ভরসা ‎ ‎

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪১ এএম
ছবি: এনপিবি
expand
ছবি: এনপিবি

দারিদ্র্যপ্রবণ জেলা কুড়িগ্রামকে বলা হয় নদ-নদীর জনপদ। ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্রসহ ১৬টি নদী বয়ে গেছে এ জেলার বুক চিরে। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের আশ্রয় হয়েছে জেলার চার শতাধিক চরাঞ্চলে।

কৃষিই তাদের প্রধান ভরসা। তবে খরচবিহীন এক অনন্য সম্পদ কাশগাছ এখন এসব দুর্গম চরবাসীর জীবিকা ধরে রাখার আরেকটি বড় নির্ভরতা হয়ে উঠেছে। ‎ ‎শরতের সাদা শুভ্র কাশফুল যতটা প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়ায়, ততটাই নদীপাড়ের মানুষের জন্য বয়ে আনে অর্থনৈতিক স্বস্তি। বিনা আবাদে, বিনা পরিচর্যায় বড় হওয়া এসব কাশগাছ এখন চরবাসীর মনে সঞ্চার করছে সচ্ছলতার ছোট্ট স্বপ্ন। ‎ ‎সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদীর বিস্তীর্ণ চরজমিতে দুলে উঠছে পাকা কাশ। ফুল ঝরে গেলে কৃষকরা কেটে রোদে শুকিয়ে বিক্রির জন্য গুছিয়ে রাখছেন।

কোনো বীজের খরচ নেই, সার নেই, পানি, শ্রম আর যত্নও লাগে না প্রকৃতির নিয়মে বেড়ে ওঠা এই গাছই বছরের এক মৌসুমে চরবাসীর কাছে হয়ে ওঠে আয়ের উৎস। ‎ ‎স্থানীয় কৃষকরা বলেন, “এক টাকা খরচও করতে হয় না। শুধু কেটে শুকাই। এ কয়েকটা মাসেই হাতে কিছু টাকা পাই, এই কাশগাছই আমাদের পরিবার চালায়।” ‎ ‎এক বিঘা জমি থেকে কৃষকরা আয় করছেন গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। প্রতিটি শুকনো কাশের বোঝা বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকায়, যা কাজহীন দিনমজুরদের কাছেও এনে দেয় আশার আলো। ‎ ‎রহিম নামের এক দিনমজুর জানান, “বছরের অনেক সময় কাজ থাকে না। এই কাশ কাটার মৌসুমটাই আমাদের ভরসা। তখন কয়েকদিন কাজ পাই, সেই আয়ে পরিবারটা কোনোমতে বাঁচাই।” ‎ ‎অন্যদিকে, রাজশাহী থেকে কাশগাছ কিনতে আসা ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, “কুড়িগ্রামের প্রায় সব চরে প্রচুর কাশ হয়। এসব কাশ দিয়ে ‘পানের বড়জ’ তৈরি হয়। ব্যবসা করে ভালোই লাভ পাই।” ‎ ‎কাশগাছ শুধু অর্থনীতিই নয়, টিকিয়ে রাখে পরিবেশ ও মাটির গঠনও। কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “কাশ চরের বালুময় জমিতে পলি ধরে রাখে। মাটির গুণাগুণ বজায় রাখে, ভূমিক্ষয়ও কমায়।” ‎ ‎কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন মনে করেন, “প্রাকৃতিক কাশকে যদি পর্যটন, হস্তশিল্প বা ওষুধ শিল্পে ব্যবহার করা যায়, নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে। শিল্প হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে নদী পাড়ের অর্থনীতিতে প্রাণ ফিরবে। বায়ুদূষণ কমাতেও কাশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।” ‎ ‎বারবার নদীভাঙনে সর্বস্ব হারানো মানুষগুলো এখন কাশগাছের মতো প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর ভর করে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে। এক সময়ের পরিত্যক্ত, বালুময়, দুর্গম চরাঞ্চল আজ পরিণত হয়েছে মৌসুমি অর্থনীতির শক্ত ভরসায়।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন