

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোহাম্মদ রেজাউল করিমকে প্রশাসনিক কারণে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় বদলি করা হয়েছে।
তাঁর স্থানে আপাতত গৌরীপুর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আলাল উদ্দিনকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিদায়ী পিআইও ইতোমধ্যেই ঈশ্বরগঞ্জ থেকে রিলিজ নিয়ে চলে গেছেন এবং কয়েক দিনের মধ্যে আলাল উদ্দিন নতুন দায়িত্বে যোগদান করবেন।
গত ২৮ অক্টোবর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা এক সংবাদ সম্মেলনে রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন যে, ২০২৪–২৫ অর্থবছরের টিআর ও কাবিখা-কাবিটা প্রকল্পের কাজের জন্য প্রায় ২৫ শতাংশ অবৈধ অর্থ নেওয়া হয়েছে।
ভ্যাট ও আয়করসহ মাস্টাররোল ও বিল-ভাউচারের নামে অতিরিক্ত তিন হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগও করা হয়। চেয়ারম্যানরা জানান, প্রকল্প বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ছিল না, কিছু প্রকল্প বেনামী প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ করা হয়েছে এবং প্রকল্প অনুমোদনে স্বার্থান্বেষী প্রভাব প্রয়োগ করা হয়েছে।
চেয়ারম্যানদের অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রকল্প প্রস্তাবনার সময় কার্যালয়ে বসে তালিকা তৈরি করা হয় এবং যাচাই-বাছাই ছাড়া অনুমোদন দেওয়া হয়।
তারা উল্লেখ করেন, প্রকল্পের বরাদ্দ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় কর্মকর্তাদের উপর চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সরবরাহকারীর সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে কিছু প্রতিষ্ঠান সুবিধা পেয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, রেজাউল করিম দীর্ঘদিন ধরে টিআর ও কাবিখা প্রকল্পে বরাদ্দ, বণ্টন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনি প্রকল্প অনুমোদনে নিজের পছন্দমতো উদ্যোগ গ্রহণ করতেন এবং কেউ চাপ না মানলে বিল অনুমোদনে বাঁধা সৃষ্টি হতো। এই অভিযোগগুলো স্থানীয় প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
রেজাউল করিম এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। সাম্প্রতিক সময়ে অফিসের নানা প্রতিবন্ধকতা এবং অযাচিত পরিস্থিতির কারণে কাজ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ৬ নভেম্বর আমি কর্তৃপক্ষ বরাবর বদলির আবেদন করেছি। অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা রহমান বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্ট দপ্তর রেজাউল করিমকে বদলি করেছে। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে কোনো প্রতিবন্ধকতা হবে না বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, শুধু বদলিই যথেষ্ট নয়। প্রকল্প বরাদ্দ ও বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা এবং দায়বদ্ধদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। তাদের মতে, রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি পরীক্ষা করার একটি বড় ইঙ্গিত।
ঈশ্বরগঞ্জে চলমান প্রকল্পগুলো সরকারিভাবে স্বচ্ছতা ও নিয়ম মেনে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে কি না স্থানীয় জনগণ এখনও সে ব্যাপারে নিশ্চিত নয়। তারা বলছেন, চলমান প্রকল্পে প্রশাসনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে এবং যে কোন অনিয়মের অভিযোগ সুষ্ঠু তদন্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তদন্ত করে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হোক।
মন্তব্য করুন