রবিবার
২৩ নভেম্বর ২০২৫, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রবিবার
২৩ নভেম্বর ২০২৫, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আদালতের রায় পেয়েও সন্তানতুল্য ইমামকে পদ ছেড়ে দিলেন বরখাস্ত ইমাম

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৪১ পিএম
ইমামকে পদ ছেড়ে দিলেন বরখাস্ত ইমাম
expand
ইমামকে পদ ছেড়ে দিলেন বরখাস্ত ইমাম

করোনাকালে জুমার নামাজে সরকারি নির্দেশনা অমান্যের অভিযোগে অব্যাহতি পাওয়া এক ইমাম আদালতের আদেশে স্বপদে বহাল হলেও বর্তমান ইমামকে পদ ছেড়ে দিয়ে বুকে টেনে নিলেন মাওলানা মো. আজিজার রহমান। সেই সঙ্গে ইতি টানলেন তাঁর বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের। ইমামের এমন মহানুভবতায় সাধুবাদ জানিয়েছেন মসজিদ কর্তৃপক্ষ ও মুসল্লিরা। তারা বলছেন, এটাই ইসলামের সৌন্দর্য।

শুক্রবার (২১ নভেম্বর) আসরের নামাজের পর এমন অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদে।

জানা যায়, আদালতের দেওয়া আদেশ অনুযায়ী গতকাল শুক্রবার মাওলানা আজিজার রহমানের নেতৃত্বে জুমার নামাজ আদায় করেন মসজিদের বর্তমান ইমাম মুফতি ওমর ফারুক রহমানী, কর্তৃপক্ষ ও মুসল্লিরা। পরে তিনি আসরের নামাজও আদায় করান। কিন্তু নামাজ শেষে ঘটে এক বিরল দৃশ্য। মুফতি ওমর ফারুক রহমানী, মসজিদ কমিটি ও মুসল্লিদের নিয়ে বসেন প্রবীণ এ আলেম। সেখানেই সন্তানতুল্য ওমর ফারুককে ইমামের দায়িত্ব চালিয়ে যেতে আহ্বান জানিয়ে তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরেন তিনি। ইমামের এমন মহত্ত্বে সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশ। তারা বলেন, এমন দৃশ্য সমাজে বিরল। আর এটাই ইসলামের সৌন্দর্য।

পরে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজ কুমার বিশ্বাস, বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তা এবং মুসল্লিরা ফুলের তোড়া উপহার দেন ৩২ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসা বিদায়ী এ ইমামকে।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের এপ্রিল—করোনা প্যান্ডেমিক তখন তুঙ্গে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় জারি করে জুমার নামাজে ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমসহ সর্বোচ্চ ১০ জন এবং অন্যান্য নামাজে ৫ জনের সীমাবদ্ধতার নির্দেশনা। আদেশ জারির পর থেকে নিয়ম মেনে চলছিল নামাজ। ১৭ এপ্রিল, শুক্রবার। হঠাৎ বাধা দেন কিছু মুসল্লি। জুমার খুতবার পর মুয়াজ্জিন ও অন্যান্য মুসল্লিসহ ১০ জন নিয়েই নামাজ শুরু করেন প্রখ্যাত এ আলেম। পরে মসজিদের পাশে থাকা মুসল্লিরা দৌড়ে এসে পিছনের কাতারে দাঁড়িয়ে যান। তাদের দায় এসে পড়ে এই ইমামের ওপর। কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ কিংবা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই ১৯ এপ্রিল বরখাস্ত করা হয় তাঁকে। অপ্রত্যাশিত এ ঘটনায় মানসিকভাবে ব্যথিত হন তিনি।

পরে ২০২০ সালের ২৩ জুন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের শরণাপন্ন হয়ে মামলা করেন। শুনানি শেষে ২০২০ সালের ১৫ জুলাই বেতনসহ ইমামকে স্বপদে বহাল রাখার আদেশ দেন আদালত। ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২৩ জুলাই জেলা জজ আদালতে আপিল করেন মসজিদ কর্তৃপক্ষ। মিস আপিল নম্বর: ১১/২০২০। দীর্ঘ শুনানি শেষে গত ২৭ অক্টোবর মসজিদ কর্তৃপক্ষের মিস আপিল নামঞ্জুর করে সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের দেওয়া রায় বহাল রাখেন আদালত।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন