

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


পঞ্চগড় সদর উপজেলায় আরিফ হোসেন নামে এক স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বিরুদ্ধে প্রতিবেশিকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তোভোগীর পক্ষের মামলা না নেয়ার অভিযোগ উঠেছে সদর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। ফলে বাধ্য হয়ে দ্বারস্থ হয়েছেন আদালতের।
মঙ্গলবার পঞ্চগড় আদালতে ভুক্তভোগী মোস্তফা জামালের ছেলে শাহিনুর রহমান বাদী হয়ে আরিফসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
জানা গেছে,ভুক্তভোগী মোস্তফা জামাল পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের কেচেড়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। গুরুতর আহত অবস্থায় বর্তমান পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে চিকিৎসারত আছেন তিনি।
অন্যদিকে অভিযুক্ত আরিফ হোসেন একই এলাকার আব্দুল কাদেরের ছেলে। তিনি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ন আহ্বায়কের পদে আছেন বলে জানা গেছে । অন্য অভিযুক্তরা হলেন- আরিফের ভাই রাকিব হোসেন ও বাবা আব্দুল কাদের, একই এলাকার জাকির হোসেন, আবু তাহের রেজা এবং আরমান হোসেন।
মামলা এজাহার ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় সদর থানা পুলিশের একটি টিম শাহিনুরের বাসায় গিয়ে তাকে ডাকেন। শাহিনুর তাতে সাড়া দিলে সদর থানার ওসি তাকে ডেকছেন বলে জানানো হয়। এরপর শাহিনুর উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের কথা মতো তাদের সাথে থানায় যান। এরপর তাকে কোন কিছু জিজ্ঞাসা না করেই লকআপে রাখা হয়। পরদিন সকাল ১০টায় ওসি কথা বলবেন বলে জানানো হয়।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকালে ওসি আব্দুল্লা হিল জামান শাহিনুরের সাথে কথা বলেন। সে সময় তিনি শাহিনুরের আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ততা আছে কিনা জানতে চান। কিন্তু শাহিনুর কোন দলের সাথে সম্পৃক্ত না বলে জানান। বিষয়টি যাচাই শেষে পুলিশ শাহিনুরের কোন রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা না পেলেও গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে। ওইদিন (শনিবার) বিকেলে আদালতে জামিন শেষে বাসায় ফিরেন শাহিনুর। শাহিনুরের অভিযোগ- এর আগেও প্রতিবেশী আবু তাহের রেজা তাকে হুমকিধামকি দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ট্যাগ দিয়ে মামলা দিয়ে হয়রানি করবে বলেও হুমকি দেওয়া হয় তাকে।
শনিবার রাতে শাহিনুরের বাবা মোস্তফা কেন তার ছেলেকে এভাবে হয়রানি করা হচ্ছে সেটার প্রতিবাদ জানাতে গেলে বিবাদীরা আবারো হুমকি দেন। ঘটনার জেরে রবিবার বিকেলে মোস্তফা জামাল আরিফদের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় অভিযুক্তরা হামলা করে। মোস্তফা জামালের কোমড়ে ছুরিকাঘাত করা হয় এবং বাম পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়। পরে পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা মোস্তফাকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। তার অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক।
এই ঘটনায় শাহিনুর বাদী হয়ে রবিবার (১৬ নভেম্বর) রাতেই আরিফ হোসেনকে প্রধান আসামী করে মোট ৬ জনের নামে সদর থানায় এজাহার নিয়ে যান। তবে শাহিনুরের দাবি, এজাহার দায়েরের পর থেকেই টালবাহানা করতে থাকে পুলিশ। মামলা রেকর্ড না করে উলটো এজাহার থেকে আসামীর নাম বাদ না দিলে মামলা রেকর্ড হবে না বলেও জানানো হয়। থানায় মামলা নথিভুক্ত না হওয়ায় উপায়ন্তর না পেয়ে আদালতে মামলা করেন ভুক্তভোগীর পরিবার।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আরিফ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং কথা বলবেন বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লা হিল জামান বলেন, শাহিনুরের এজাহারে এনআইডি নম্বর ভুল ছিল। আমরা তা সংশোধন করে পুনরায় এজাহার জমা দিতে বলেছি। কিন্তু তিনি তা করেননি। এছাড়াও কিছু বিষয় আছে। তবে তারা এনআইডি নম্বর সংশোধন করে দিলে মামলা নিব।
অপরদিকে, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সি বিষয়টির খোঁজ নিয়ে বলেন, বাদী এজাহারের স্বাক্ষর না করায় মামলা নথিভুক্ত করতে পারেনি পুলিশ। বাদীকে থানায় আসতে বলুন পুলিশ মামলা নিবে।
তবে ওসির এমন মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বাদী শাহিনুর রহমান। তিনি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, এজাহারে এনআইডি নম্বর যেমন ভুল ছিল না তেমনি এজাহারে স্বাক্ষর করিনি- এটাও মিথ্যা। এজাহারে স্বাক্ষর না থাকলে ডিউটি অফিসার সেদিন এজাহার জমা নিতেন না।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) ফরহাদ হোসেন বলেন, যদি কগনিজিবল অফেন্সের কোন ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে ভিকটিম আইনের মধ্যে থেকে যতটুকু সহযোগিতা পাওয়ার কথা সে পাবে। এখানে অন্য বিবেচনার সুযোগ নেই।
মন্তব্য করুন