

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বিয়ের মাত্র ১৩ দিনের মাথায় ছুরিকাঘাতে আবু বক্কর ওরফে আসিফ (২৬) নামে এক প্রবাসীকে হত্যার প্রতিবাদে লাশ নিয়ে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত সৈয়দপুর এলাকায় এ অবরোধ চলে। নিহত আসিফ উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়নের কেন্ডা গ্রামের মৃত ফটিক মিয়ার ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন সৌদি আরবে প্রবাসজীবন কাটিয়ে দুই মাস আগে দেশে ফিরেছিলেন।
গত ২৭ অক্টোবর তিনি সদর দক্ষিণ উপজেলার আবদুল্লাহপুর এলাকার সুমাইয়া আক্তার সুইটিকে বিয়ে করেন।
পরিবারের অভিযোগ, স্ত্রীর সাবেক প্রেমিক রাব্বি ওরফে বাপ্পি পূর্বপরিকল্পিতভাবে গত ৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় আসিফকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেন।
গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকার পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শুক্রবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।
নিহতের ছোট ভাই আরাফাত হোসেন জানান, তাঁর ভাই আবু বক্কর ওরফে আসিফ দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন। দুই মাস আগে ছুটিতে দেশে আসেন। গত ২৭ অক্টোবর তিনি আবদুল্লাহপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার সুইটিকে বিয়ে করেন।
গত ৮ নভেম্বর দুপুরে নববিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যান। একই দিন সন্ধ্যায় শ্যালক শান্তসহ আসিফ অলির বাজারে ঘুরতে যান।
কিছুক্ষণ পর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে তাঁরা আবদুল্লাহপুরে শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। সাদিয়া দারুল উলুম মাদরাসার সামনে পৌঁছালে ওত পেতে থাকা বাপ্পি ও পারভেজ নামে দুই যুবক তাঁর ভাইকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে সদর দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ঢাকার পিজি হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে শুক্রবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
পরে তাঁরা জানতে পারেন, বাপ্পি নামে এক যুবকের সঙ্গে আসিফের স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার সুইটির বিয়ের আগে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে স্ত্রীও জড়িত থাকতে পারেন।
আরাফাত আরও অভিযোগ করেন, ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিতে ভাবি সুমাইয়া আক্তার সুইটি সদর দক্ষিণ থানায় ছুরিকাঘাতের একটি মামলা দায়ের করেছেন। “আমি ভাই হত্যার বিচার চাই। আমরা আদালতে ভাবিকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করব।”
এদিকে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত নিহত আসিফের পরিবার ও এলাকাবাসী লাশ নিয়ে চৌদ্দগ্রামের সৈয়দপুর এলাকায় ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন।
এ সময় বিক্ষোভ মিছিলও বের করা হয়। এলাকাবাসীর দাবি, স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার সুইটির প্ররোচনায় তাঁর সাবেক প্রেমিক ও সহযোগীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে আসিফকে হত্যা করেছে। ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে নিতে সুইটি বাদী হয়ে ২৬ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। অবরোধের কারণে মহাসড়কের দুই পাশে প্রায় চার কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
পরে চৌদ্দগ্রাম মডেল থানা ও মিয়াবাজার হাইওয়ে পুলিশ গিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে বিক্ষুব্ধ জনতা অবরোধ তুলে নেয়।
অভিযোগ অস্বীকার করে নিহতের স্ত্রী সুমাইয়ার বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, “আমার মেয়ে এসবের সঙ্গে জড়িত নয়। তাঁর আগে কোনো প্রেমের সম্পর্কও ছিল না। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার চাই।”
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, “বিষয়টি সদর দক্ষিণ থানার মামলার। নিহতের স্বজনদের দাবির কারণে মহাসড়কে বিক্ষোভ হয়। পুলিশ সুপার ও আইজিপিকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।”
সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সেলিম বলেন, “ঘটনার পর অভিযুক্তরা পলাতক। তথ্য–প্রযুক্তির সহায়তায় তাঁদের গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে।”
মন্তব্য করুন