শনিবার
১৫ নভেম্বর ২০২৫, ৩১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শনিবার
১৫ নভেম্বর ২০২৫, ৩১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুমিল্লায় বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা, ৯ মাসে প্রাণ গেল ৫২৫ জনের

মো. দুলাল মিয়া, কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৪৭ পিএম আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৫০ পিএম
প্রতীকী ছবি
expand
প্রতীকী ছবি

কুমিল্লা অঞ্চলের মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কগুলো ক্রমেই অনিরাপদ হয়ে উঠছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর এই নয় মাসে কুমিল্লা রিজিয়নে ৮৪২টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫২৫ জন। আহত হয়েছেন এক হাজার ২১০ জন।

গত বছরের একই সময়ে দুর্ঘটনা হয়েছিল ৬৩০টি; নিহত হয়েছিলেন ৫২২ জন এবং আহত হন ৭৮৪ জন। তুলনায় এবার নয় মাসেই দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা পুরো বছরের চেয়ে বেড়ে গেছে।

হাইওয়ে পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, কুমিল্লা রিজিয়নের আওতায় ঢাকা-চট্টগ্রাম, কুমিল্লা-নোয়াখালী, কুমিল্লা-সিলেট ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ৭৯২ কিলোমিটার জুড়ে এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে। গড়ে প্রতিদিন তিনটি দুর্ঘটনায় দু’জনের মৃত্যু এবং পাঁচজন আহত হন।

শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি টোলপ্লাজা থেকে চট্টগ্রাম সিটি গেট পর্যন্ত অংশেই ৪৬৫টি দুর্ঘটনায় ২৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে; আহত হয়েছেন ৫০৯ জন।

মহাসড়কে নিরাপত্তা বাড়াতে এবং গতিনিয়ন্ত্রণে ১৫২ কোটি টাকার প্রকল্পে প্রায় দেড় হাজার সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হলেও সবগুলো এখনো কার্যকর হয়নি।

হাইওয়ে পুলিশ জানায়, শুধু কিছু এলাকার ক্যামেরা সচল আছে-এসব থেকে অতিরিক্ত গতির যান শনাক্ত করে মামলার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

২০২১ সালে শুরু হওয়া ‘হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হলেও পুরো নেটওয়ার্ক এখনো হাইওয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর হয়নি।

বিআরটিএ কুমিল্লার মোটরযান পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম বলেন, চালকদের বেপরোয়া গতি অন্তত ৪০ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। জনবল সংকটে নিয়মিত অভিযান চালানো যায় না।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহসভাপতি কবির আহমেদ বলেন, মহাসড়কে নছিমন, করিমন, থ্রি-হুইলারসহ অবৈধ যানবাহনের চলাচলই দুর্ঘটনার বড় কারণ। তাঁর ভাষায়, বৈধ গাড়ির চেয়ে অন্তত ২০ গুণ বেশি চলছে অবৈধ গাড়ি। ৯০ ভাগ দুর্ঘটনাই ঘটছে বৈধ-অবৈধ গাড়ির সংঘর্ষে।

তিনি আরও জানান, দেশে রেজিস্ট্রেশন আছে ৬২ লাখ গাড়ির, কিন্তু বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী চালক আছেন মাত্র ২৯ লাখ অর্থাৎ ৩৩ লাখ যান চলে লাইসেন্সবিহীন চালকের হাতে।

হাইওয়ে পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ৬২ কিলোমিটার দীর্ঘ কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক এখন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। বন্যা ও বর্ষণে সড়কের বড় অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই সেখানে দুর্ঘটনা ঘটছে। সুগন্ধা পরিবহনের চালক খোকন বলেন, এই রাস্তায় এমন দিন যায় না যেদিন দুর্ঘটনা হয় না। বড় গাড়ি আর ছোট যানবাহন ভাঙা রাস্তায় এসে বারবার সংঘর্ষে জড়াচ্ছে।

কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আদনান ইবনে আলম বলেন, প্রায় দেড়শ কিলোমিটার সড়ক নষ্ট হয়েছে। ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে সংস্কার শেষ করার চেষ্টা চলছে।

মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন নিষিদ্ধের উদ্যোগ নিলেও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়নি। অতিরিক্ত ডিআইজি শাহিনুর আলম খান বলেন, গণপরিবহন না বাড়ালে এসব তিন চাকার যান পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে না। অনেক মানুষের জীবিকা জড়িত। গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যাতে না ঢোকে, সে চেষ্টা চলছে।

সিসিটিভি মনিটরিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সব ক্যামেরা এখনো আমাদের কাছে হস্তান্তর হয়নি। যে কয়েকটি সচল আছে, মেঘনাঘাট থেকে সেগুলো মনিটরিং করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তগুলো মেরামতের কাজ চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা ঠেকাতে চালক ও যানবাহনের লাইসেন্স ব্যবস্থায় কঠোরতা, দ্রুত সড়ক সংস্কার এবং সিসিটিভি নজরদারি পুরোপুরি কার্যকর করা জরুরি। তা না হলে সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামবে না।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন