শুক্রবার
১৪ নভেম্বর ২০২৫, ৩০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
১৪ নভেম্বর ২০২৫, ৩০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুড়িগ্রামে তিন বছর বয়সে সন্তানের পিতা!  ‎ ‎

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ১০:১১ এএম
ছবি: সংগৃহীত
expand
ছবি: সংগৃহীত

‎মাত্র তিন বছর বয়সেই হয়েছেন পিতা! আশ্চর্যজনক হলেও সত্য ঘটনাটি কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায়। অর্থের বিনিময়ে বয়স জালিয়াতি করে সন্তানের থেকে মাত্র তিন বছরের বড় পিতা নিয়েছেন চাকরি।

উপজেলার গ্রাম পুলিশ নিয়োগে সিন্ডিকেট চক্র হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় কোটি টাকা। তবে এই বিষয়ে ক্যামেরায় কথা বলতে রাজি নন জেলা প্রশাসনের কেউ। ‎ ‎কুড়িগ্রাম জেলা থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন উপজেলা রৌমারী। এই উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের পুরাতন যাদুরচর গ্রামের বাসিন্দা হাফিজুর রহমান।

সংসার জীবনে তার রয়েছে স্ত্রী, দুই ছেলে আর এক মেয়ে। সন্তানদেরও বিয়ে দিয়েছেন কয়েক বছর আগে। গ্রাম পুলিশের চাকরির জন্য মোটা অংকের বিনিময়ে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরবেশ আলীর সহায়তায় জন্ম নিবন্ধনে বয়স জালিয়াতি করে ২৯ বছর দেখিয়ে নিয়েছেন চাকরিও। ‎ ‎গত আগস্ট মাসে উপজেলায় ৫টি ইউনিয়নে ১৯ জন গ্রামপুলিশ নিয়োগে জনপ্রতি প্রায় ৪ লাখ টাকা করে গড়ে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সিন্ডিকেট চক্রটি। তিনি বয়স জালিয়াতি করে গত ২৮ আগস্ট মাসে যোগদান করেন ওই ইউনিয়নে।

এর আগে রৌমারী উপজেলা প্রশাসন চলতি বছরের ০৬ মে যাদুরচর ইউপি-২ জন, দাঁতভাঙ্গা ইউপি ৭ জন, রৌমারী ইউপি ৫ জন, বন্দবেড় ইউপি ৪ জন এবং শৌলমারী ইউপিতে ১ জন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। ‎ ‎অনুসন্ধানে দেখা যায়,জাতীয় পরিচয় পত্রে ডিজিটের শেষে ২৩০ নং ভোটারে যাদুরচর ইউনিয়নের পুরতান যাদুরচর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস ছামাদ-দরদী খাতুন দম্পত্তির পুত্র হাফিজুর রহমান। সেখানে হাফিজুরের বয়স ০৭ মে ১৯৮৫ সাল।

তিনি চলতি বছর ২৭ মে জন্মনিবন্ধন করেছেন ০৭ মে ১৯৯৬ সাল দেখিয়ে। যার জন্মসনদ নং-১৯৯৬৪৯৯১৭৯৩৫১৩৬৩০৪। অথচ তার ছেলে নয়ন মিয়ার জাতীয় পরিচয় পত্রে ভোটার ডিজিটের ৩৭২নং এ ০১ মার্চ ১৯৯৯ সাল। এতে কের পুত্রের চেয়ে মাত্র তিন বছরের বড় পিতা। আর বড় মেয়ের থেকে দেড় বছরের বড় পিতা। ‎ ‎ওই ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রবিউল হক বলেন,হাফিজুরসহ তার স্ত্রী,সন্তান সকলেই ভোটার হয়েছেন। জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে বয়স জালিয়াতি করে হাফিজুর রহমান গ্রামপুলিশের চাকুরি নিয়েছেন।

অথচ তার এনআইডি কার্ড রয়েছে। বয়স জালিয়াতি করে চাকুরি তো আর এমনি এমনি কেউ দেয় না? এখানে অবশ্যই মোটা অংকের লেনদেন হয়েছে। কিভাবে চাকুরি হলো তা নিয়োগ দাতারাই ভালো বলতে পারবেন?

‎ওই ইউনিয়নের ৫নং ওয়াডের কাউন্সিলর হযরত আলী বলেন,হাফিজুর তার ছেলে-মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। তাদের ঘরেও সন্তান রয়েছে। ‎ ‎একাধিকবার তারা ভোট প্রদান করেছেন। কিন্তু বয়স জালিয়াতি করে এভাবে গ্রামপুলিশের চাকুরি অর্থ লেনদেন ছাড়া সম্ভব নয়। যোগ্য ব্যক্তি অনেকেই বঞ্চিত হয়েছে। ‎ ‎নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক গ্রামপুলিশ বলেন,আমার নিকট চেয়ারম্যান তিন লাখ টাকা নিয়ে চাকরি দিয়েছে। শুনেছি গ্রামপুলিশ নিয়োগে জনপ্রতি ৩/৪লাখ টাকা করে নিয়ে নিয়োগ দিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। ‎ ‎স্থানীয় বাসিন্দা মজিবর, শমসের আলী বলেন, ইউনিয়নের যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে গ্রামপুলিশ পদে নিয়োগ দেয়ায় ক্ষোভ বিরাজ করছে। নিয়োগের এমন কারসাজির তদন্ত করে বিচারের দাবী স্থানীয়দের। ‎ ‎যাদুরচর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সরবেশ আলী হাফিজুর রহমানের স্কুল ও জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে চাকরি দেবার কথা স্বীকার করে আর্থিক লেনদেন হয়নি বলে জানান তিনি। ‎ ‎রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জল কুমার হালদার বলেন, বয়স জালিয়াতি করে চাকরি দেয়া হয়েছে এমন কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত করে দেখা হবে। ‎ ‎এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ বলেন,আপনার নিকট প্রথম জানতে পারলাম। এই বিষয়ে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবার আশ্বাস দেন।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন