বৃহস্পতিবার
১৩ নভেম্বর ২০২৫, ২৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বৃহস্পতিবার
১৩ নভেম্বর ২০২৫, ২৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আ.লীগ কর্মীদের না ছাড়ায় পুলিশের হাড়গোড় ভাঙার হুমকি যুবদল নেতার

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১১:১৮ এএম
পলিশকে হাড়গোড় ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন যুবদল ও ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীরা
expand
পলিশকে হাড়গোড় ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন যুবদল ও ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীরা

ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল থানায় আটক আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের না ছাড়ায় থানার ওসি ও পুলিশ সদস্যদের গালিগালাজ করে হাড়গোড় ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন যুবদল ও ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

বুধবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে রাণীশংকৈল থানায় এ ঘটনা ঘটে। এরপর পুলিশ নিজে একটি জিডি করেছে বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) শেখ জাহিদুল ইসলাম।

রানীশংকৈল থানা সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার মধ্যরাতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগের চার কর্মী-সমর্থককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন—বাচোর ইউনিয়নের রাজোর এলাকার মৃত বজির উদ্দিনের ছেলে হামিদুর রহমান (৬০), তার ছেলে সারোয়ার নুর লিওন (৩২), ভাউলারবস্তি সম্পদবাড়ি এলাকার মৃত হুসেন আলীর ছেলে খলিলুর রহমান (৫০) এবং ধর্মগড় এলাকার এনামুল হকের ছেলে জিয়াউর রহমান (৪২)।

হামিদুর ও সারোয়ার ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাহিদুল ইসলামের এলাকায় বাড়ি। তাদের গ্রেপ্তার করে গাড়িতে তোলার সময় জাহিদুল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে এ দুজনকে ছেড়ে দিতে পুলিশকে চাপ দেন। কিন্তু পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে আসে। পরে তাদের ছাড়াতে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাহিদুল বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেন। এরপর তার নেতৃত্বে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন নেতাকর্মী ও আসামীদের আত্মীয়-স্বজন থানায় উপস্থিত হয়।

পুলিশ আরোও জানায়, পরবর্তীতে জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার যুবদলের সভাপতি মোঃ নাজমুল হুদা মিঠু থানায় এসে হামিদুর ও সারোয়ারকে তার আত্মীয় দাবি করে ওসিকে ছাড়ার অনুরোধ করেন এবং আর্থিক প্রস্তাব দেন। ওসি তা প্রত্যাখ্যান করলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওসি ও অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং “হাড়গোড় ভেঙে দেব” বলে হুমকি দেন।

অভিযোগের বিষয়ে নাজমুল হুদা মিঠু বলেন, “রাতে কয়েকজনকে পুলিশ আটক করে, তাদের মধ্যে আমার ব্যবসায়িক পার্টনারও ছিল। আমি ওসিকে ফোন দিচ্ছিলাম, পরে তিনি নিজেই আমাকে থানায় ডাকেন। আমি থানায় গিয়ে বলি তারা কোনো দল করে না। তখন ওসি ক্ষেপে যান।

তবে আসামি ছিনিয়ে নেয়ার মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। আর প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়নি। আমি বলেছি ৪-৫ তারিখ (আগস্ট ২০২৪) যখন থানা জ্বালিয়ে দিতে যায় তখন জেলার এক নেতা আমাকে বলে এটা জাতীয় সম্পদ তোমাকে রক্ষা করতে হবে। তাই আমি সবাইকে নিয়ে সেদিন থানা রক্ষা করেছিলাম। এ কথা ওনাকে আমি শোনাচ্ছিলাম। হুমকি বা প্রাণনাশের কোন কথাই আমি বলিনি

বাচোর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাহিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার বক্তব্য পাওয়া না গেলেও, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মো. জাহিদ বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে মন্তব্য করতে পারবেন না। তবে ঘটনা সত্য হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবেন।

আর রানীশংকৈল থানার ওসি মুহাম্মদ আরশেদুল হক বলেন, আওয়ামী লীগের আসামি ধরেছিলাম চারজন। এজন্য আমাকে গালিগালাজ করেন পীরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সভাপতি মিঠু। তিনি আমাকে ‘দেখে নিব, থানা উড়িয়ে দেব, বাইরে গেলে ঠ্যাং ভেঙে দিব, কীভাবে চাকরি করেন দেখে নিব’ বলে নানানভাবে হুমকি দেন। শুধু আমাকে নয় যে অফিসার আসামিদের ধরেছিল তাকেও গালিগালাজ করেন। বিষয়টি আমি আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে জানিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা রয়েছে। আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের চারজন আসামিকে ধরায় পীরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সভাপতি মিঠু আমাকে ও অন্যান্য পুলিশকে গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকি দেন। বিষয়টি আমি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।

জেলা পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা ইতিমধ্যে জিডি করেছি এবং যুবদলের হাই কমান্ডের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন ব্যবস্থা নেওয়ার। আমরা তদন্ত করে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন