বুধবার
১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বুধবার
১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী দেখলেই ব্রাশফায়ারের নির্দেশ দিলেন সিএমপি কমিশনার

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৫৭ পিএম
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ
expand
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে হত্যাকাণ্ড ও অস্ত্রবাজি রোধে কঠোর নির্দেশনা জারি করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ।

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাতে পুলিশের সব সদস্যের উদ্দেশে ওয়্যারলেস বার্তায় তিনি নির্দেশ দেন, যে কেউ আগ্নেয়াস্ত্র বহন করবে বা অস্ত্র হাতে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে লিপ্ত হবে, তাকে দেখামাত্র সাবমেশিন গান (এসএমজি) দিয়ে ব্রাশফায়ার করতে হবে।

সিএমপি কমিশনার স্পষ্ট করে বলেন, এই নির্দেশনা শুধুমাত্র অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের জন্য প্রযোজ্য — কোনোভাবেই নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে না।

সিএমপির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, মঙ্গলবার দুপুরে কমিশনার ওয়ারল্যাস সেটের মাধ্যমে টহল ও থানা পুলিশকে একাধিকবার নির্দেশ দেন— ‘শটগান হবে না, চায়না রাইফেলও বাদ, এখন এসএমজি ব্রাশফায়ার মুডে থাকবে।’

একই সঙ্গে পুলিশের উদ্দেশে তিনি টহল ও অভিযানে শিশা শটগান, দুইটি গ্যাস গান এবং নাইন এমএম পিস্তল বহন করার নির্দেশ দেন। এ ছাড়া স্থায়ী চেকপোস্ট সাতটি থেকে বাড়িয়ে ১৩টি করার নির্দেশ দিয়েছেন কমিশনার।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, গত ৫ নভেম্বর নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার চালিতাতলীর খন্দকারপাড়া এলাকায় বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে সন্ত্রাসীদের গুলিতে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেন বাবলা নিহত হন। একই ঘটনায় এরশাদ উল্লাহও আহত হন। পরদিন একই এলাকায় গুলিতে এক প্রতিবন্ধী রিকশাচালক আহত হন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিএমপি কমিশনার নতুন করে এ নির্দেশনা দেন।

এ বিষয়ে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, দেখামাত্র ব্রাশফায়ার হবে শুধুমাত্র অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের জন্য। নিরস্ত্র জনসাধারণের ওপর এটি প্রয়োগ করা হবে না। এমনকি আওয়ামী লীগের যারা ঝটিকা মিছিল করে এটা তাদের ওপর প্রয়োগ হবে না। তাদের গ্রেপ্তার করব, আদালতে সোপর্দ করবো।

তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য সন্ত্রাসীদের নগরে প্রবেশের সাহসই কমানো। আমাদের এলাকায় প্রকাশ্যে হত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সন্ত্রাসীরা যেন আর সাহস না পায়, সেজন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য নির্দিষ্ট সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণ করা। দণ্ডবিধি ৯৬ থেকে ১০৬ পর্যন্ত পুলিশ সদস্যদের আত্মরক্ষার অধিকার সবসময় রয়েছে। প্রয়োজনে সব দায় আমি বহন করব।

এর আগে ১১ আগস্ট নগরের বন্দর থানার সল্টগোলা ক্রসিং—ইশান মিস্ত্রি হাট এলাকায় অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু সাঈদ ওরফে রানা গুরুতর আহত হন।

পরদিন (১২ আগস্ট) সিএমপি কমিশনার ওয়্যারলেসে সব সদস্যকে মৌখিক নির্দেশ দেন যে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পূর্বে যে অস্ত্রবিধি বা প্রাধিকার কার্যকর ছিল, সে অনুযায়ী থানার মোবাইল পার্টি, পেট্রোল পার্টি, ডিবি টিম ও অন্যান্য সকল ফোর্স অস্ত্র বহন করবে। কমিশনার বলেন, কোনো পেট্রোল, মোবাইল বা ডিবি পার্টি লাইভ অ্যামিউনিশন বা আগ্নেয়াস্ত্রবিহীনভাবে বের হওয়া চলবে না — ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পূর্বের প্রাধিকার অনুযায়ীই ডিউটিতে যাবে। আগে নির্ধারিত প্রটোকল অনুযায়ী অস্ত্র, গোলাবারুদ ও স্যুট পরিধান করে টহলে যেতে হবে।

তিনি আরো জানান, শুধু রবার বুলেট দিয়েই পরিস্থিতি মোকাবিলা সম্ভব হচ্ছে না এবং বন্দরে একজন এসআই গুরুতর আহত হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। বড় কোনো দুর্ঘটনা এড়াতে নাকি কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে — এমন সতর্কবাণীও দেন তিনি। কমিশনার বলেন, যদি কোনো টহল বা চেকপোস্ট পার্টির সামনে কেউ অস্ত্র উন্মুক্তভাবে দেখায় তা ধারালো অস্ত্র বা আগ্নেয়াস্ত্র—ইতিমধ্যে নির্দেশনা, এমন অবস্থায় অস্ত্র বের করলেই গুলি চালানো হবে।

কমিশনার আরও উল্লেখ করেন, পুলিশ কর্মকর্তা-নিযুক্তির ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকার প্রযোজ্য (দণ্ডবিধি সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী) এবং প্রয়োজনে শাসনব্যবস্থার স্বার্থে সরকারি গুলির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন