সোমবার
১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সোমবার
১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গরিবের ছাগল আত্মসাৎ, অভিযোগ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

এম এ রাজা, হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:১০ পিএম আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৪৩ পিএম
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিঠুন সরকার
expand
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিঠুন সরকার

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিঠুন সরকারের বিরুদ্ধে সরকারি প্রকল্পের ছাগল বিতরণে অনিয়ম, আত্মসাত ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে দারিদ্র্য বিমোচনের নামে নিম্নমানের, অসুস্থ ও মিশ্র জাতের ছাগল কিনে উপকারভোগীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এর ফলে বিতরণের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই অন্তত ৫০টি ছাগল মারা গেছে এবং আরও প্রায় ২০০টি ছাগল অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকৃত হতদরিদ্রদের বাদ দিয়ে কর্মকর্তারা নিজেদের পছন্দের ব্যক্তি ও প্রভাবশালীদের তালিকা তৈরি করে ছাগল বিতরণ করেছেন। এতে প্রকৃত উপকারভোগীরা সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। সচেতন মহলের মতে, নিম্নমানের ছাগল বিতরণের মাধ্যমে সরকারি অর্থের অপচয় ঘটছে, যা সরকারের প্রকল্পের উদ্দেশ্যকেই ব্যর্থ করছে। অনেকেই একে “গরিবের সঙ্গে প্রতারণা” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারের “সমতলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক ও জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প” এর আওতায় এই কর্মসূচি নেওয়া হয়। প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য ছিল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন, আমিষের চাহিদা পূরণ ও জীবনমান উন্নয়ন। তবে প্রকল্প অনুযায়ী উপকারভোগীদের উন্নত জাতের ছাগল, ঘর নির্মাণ সামগ্রী, খাদ্য ও অন্যান্য উপকরণ দেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র ছাগল বিতরণ করা হয়েছে। শেড নির্মাণ সামগ্রী ও খাদ্য বিতরণ এখনো সম্পন্ন হয়নি।

উপজেলার নোয়াপাড়া, বৈকুণ্ঠপুর, জগদীশপুর, সুরমা ও তেলিয়াপাড়া চা-বাগানের ২০০টি পরিবারকে মোট ৪০০টি ছাগল দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, বাস্তবে এর চেয়ে কম সংখ্যক ছাগল বিতরণ করা হয়েছে।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে আরও জানা যায়, বিতরণের পর ২০টি ছাগল জবাই করে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিঠুন সরকার কিছু রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে ভাগবাটোয়ারা করেছেন।

নোয়াপাড়া চা-বাগানের উপকারভোগী বিপেন বুনার্জি বলেন, “ছাগল পাওয়ার দুই দিনের মাথায় একটি এবং এক সপ্তাহ পর আরেকটি মারা যায়। ছাগলগুলো আগে থেকেই অসুস্থ ছিল।” একই এলাকার মরিয়ম বিশ্বাস বলেন, “দুইটি ছাগলের একটি মারা গেছে, আরেকটি এখনো অসুস্থ অবস্থায় আছে।”

নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য দুলাল ঘোষ বলেন, “আমাদের এলাকায় অন্তত ছয়টি ছাগল মারা গেছে, আরও কয়েকটি অসুস্থ আছে বিষয়টি আমরা অফিসে জানিয়েছি।”

অভিযোগের বিষয়ে মাধবপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিঠুন সরকার বলেন, “এই পর্যন্ত ২০টি ছাগল মারা গেছে। ৫০টি মারা যাওয়ার তথ্য ভুল।”

কি কারনে মারা গেছে, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ”ঠান্ডা সর্দি কাশি এবং পাতলা পায়খানা হয়ে ছাগলগুলো মারা গেছে।”

তবে স্থানীয়রা অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন