

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় নিজের মেয়ে লামিয়া আক্তার মুন্নি (১৫) হত্যার বিচারের দাবিতে কাফনের কাপড় জড়িয়ে আমরণ অনশনে বসেন বাবা মোশারফ হোসেন হাওলাদার।
রোববার (৯ নভেম্বর) সকাল ১১টায় তিনি মঠবাড়িয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে এই অনশন শুরু করেন।
দুপুর দুইটার দিকে মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি হিসেবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ রাইসুল ইসলাম অনশনস্থলে গিয়ে আইনগত সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন এবং জুস পান করিয়ে মোশারফ হোসেনের অনশন ভাঙান।
এর আগে, গত ৪ নভেম্বর বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে একই দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেন মোশারফ হোসেন।
মোশারফ হোসেন মঠবাড়িয়া পৌর শহরের সবুজ নগর এলাকার চান মিয়া হাওলাদারের ছেলে। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ২০২৩ সালের ২০ মার্চ তার ১০ম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে লামিয়া আক্তার মুন্নি নির্মমভাবে খুন হয়।
মোশারফ হোসেন অভিযোগ করেন, তার স্ত্রী সাহিদা আক্তার সোনি সুন্দরী হাওয়ায় তৎকালীন মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও টিকিটিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রিপনের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। রিপনের প্রভাবে তাকে (মোশারফকে) ডিভোর্স দিয়ে তিনি রিপনের ঘরে রক্ষিতা হিসেবে বসবাস করতে থাকেন।
পরবর্তীতে সাহিদা আক্তার দাউদখালী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলামের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এই সম্পর্ক বৈধ করার জন্য তার মেয়ে মুন্নিকে শহিদুলের ছেলে হাসানের সঙ্গে কথিতভাবে বিয়ে দেওয়া হয়। তবে মোশারফের দাবি, তার মেয়ের কোনও বৈধ বিয়ে হয়নি।
তার অভিযোগ, সাহিদা আক্তার ও শহিদুল মেম্বার অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি তার মেয়ে মুন্নি জেনে যাওয়ায় তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
পরবর্তীতে শহিদুল মেম্বারের বাড়ির লোকজন লামিয়ার লাশ বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
মোশারফ জানান, ঘটনার ১৮ ঘণ্টা পর তিনি খবর পেয়ে ফ্রিজে রাখা মেয়ের লাশ শনাক্ত করেন এবং নিজের খরচে পোস্টমর্টেম করান। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান রিপন জমাদ্দার প্রভাব খাটিয়ে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পরিবর্তন করান বলে তার অভিযোগ।
তিনি আরও বলেন, “চেয়ারম্যান রিপন, শহিদুল মেম্বার, শহিদুলের ছেলে হাসান ও আমার প্রাক্তন স্ত্রী সাহিদা আক্তার— এরা সবাই আমার মেয়ের হত্যাকাণ্ডে জড়িত। কিন্তু রিপন নিজেদের বাঁচাতে সাহিদাকে বাদী বানিয়ে একটি প্রহসনমূলক মামলা করান, যা পরে অর্থের বিনিময়ে মীমাংসা হয়ে যায়।”
মোশারফ হোসেন জানান, তিনি পরবর্তীতে নিজেই আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন, কিন্তু প্রভাবশালী মহলের কারণে এলাকায় থাকতে পারেননি এবং মামলাটি নষ্ট হয়ে যায়।
তিনি বলেন, “আমি আমার মেয়ের হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। মামলাটি পুনরায় চালু করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।” অনশনে মোশারফ হোসেনের বক্তব্য শুনে উপস্থিত অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
মঠবাড়িয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ রাইসুল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি সত্যিই হৃদয়বিদারক। আমরা মোশারফ হোসেনের মেয়ের হত্যার বিচার পেতে সর্বাত্মক আইনি সহযোগিতা করব।”
মন্তব্য করুন