

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে বিএনপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা নেমে এসেছে।
কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) বেনজির আহমেদ টিটোকে বাদ দিয়ে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির নিষ্ক্রিয় সদস্য লুৎফর রহমান মতিনকে মনোনয়ন দেওয়ায় জনমনে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
৩ নভেম্বর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭ আসনের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এটি প্রাথমিক তালিকা, প্রয়োজনে পরিবর্তন হতে পারে।
কিন্তু টাঙ্গাইল-৪ আসনের তালিকায় টিটোর নাম না থাকায় তৃণমূলে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় নেতারা বলছেন, বিএনপির কঠিন সময়ের কান্ডারি ছিলেন বেনজির আহমেদ টিটো।
ছাত্রজীবনে আন্দোলনে সক্রিয় থেকে তিনি একাধিকবার কারাভোগ করেছেন, এমনকি পুলিশের টিয়ারসেলে আহত হয়ে ৮টি দাঁত হারান। ২০০৭ সালের ১/১১ সময়েও তিনি কালিহাতীতে বিএনপিকে সক্রিয় রাখতে কাজ করেছেন।
অন্যদিকে ঘোষিত প্রার্থী লুৎফর রহমান মতিন নিয়ে তৃণমূলে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন রাজনীতি থেকে দূরে থাকা, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, এমনকি শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার।
স্থানীয় ভোটারদের বক্তব্যে উঠে এসেছে, বিএনপির তৃণমূল এখনো বেনজির টিটোর পক্ষেই আছে।
পৌজান গ্রামের প্রবীণ নেতা আব্দুল জলিল মিয়া (৭০) বলেন, আমরা বিএনপির প্রথম দিন থেকে আছি। টিটো ভাই ছাড়া কালিহাতীতে বিএনপির অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। উনি মাঠে ছিলেন, জেলেও ছিলেন। এখন তার নাম না থাকায় মন ভেঙে গেছে।
গোহালিয়াবাড়ি গ্রামের বেসরকারি একটি কোচিংয়ের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, রাজনীতিতে ত্যাগী মানুষ দরকার। টিটো ভাই এমন একজন যিনি ব্যক্তিস্বার্থের জন্য নয়, আদর্শের জন্য কাজ করেন। উনাকে বাদ দেওয়া দলের ক্ষতি।
সহদেবপুর ইউনিয়নের ট্রাকচালক সোহেল রানা বলেন, আমরা সাধারণ ভোটার। কাকে পছন্দ করি? যিনি বিপদে পাশে থাকেন। টিটো ভাই মামলা খাওয়া ছেলেদের জামিনে দৌড়ান, খবর নেন। এমন মানুষকে বাদ দেওয়া মানে অন্যায়।
কালিহাতী পৌর এলাকার গৃহবধূ রুমানা পারভীন বলেন, টিটো ভাই সব সময় মানুষের খোঁজ রাখেন। কেউ অসুস্থ হলে ফোন দেন, সাহায্য করেন। তার নাম না থাকায় নারীরা হতাশ।
দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, বন্যার সময় আমরা দেখেছি, টিটো ভাই নিজে কাঁধে ত্রাণ নিয়ে গেছেন। এমন নেতার বিকল্প এই এলাকায় নেই।
স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীরা বলেন, আমরা তরুণরা টিটো ভাইয়ের ওপর ভরসা করি। উনি মাঠে থাকলে আন্দোলনে প্রাণ আসে। ওনাকে বাদ দেওয়া তৃণমূলের সঙ্গে অবিচার।
কালিহাতী বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা রাজনীতি বুঝি না, কিন্তু মানুষ বুঝি। টিটো ভাই ভোরে দোকান খোলার সময়ও থেমে কথা বলেন, খবর নেন। এমন নেতার নাম না থাকা মানে জনগণকে হতাশ করা।
কালিহাতী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ভিপি রফিক বলেন, বেনজির আহমেদ টিটো ছিলেন কালিহাতীর প্রাণভোমরা। তার নেতৃত্বেই আমরা মাঠে টিকে ছিলাম। কেন্দ্রে বসে সিদ্ধান্ত নিলে তৃণমূলের বাস্তবতা ধরা পড়ে না।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটো বলেন, এখনো চূড়ান্ত মনোনয়ন হয়নি। নেতাকর্মীরা শান্ত আছে। আমি দলের সিদ্ধান্তের ওপর আস্থা রাখি। যারা আমাকে ভালোবাসে, তাদের ধৈর্য ধরতে বলেছি।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, কালিহাতীর বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। মাঠের বাস্তবতা যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রয়োজন মনে করলে প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে।
সাধারণ নেতাকর্মী ও ভোটাররা আশা করছেন, দলীয় নেতৃত্ব স্থানীয় কর্মীদের ত্যাগ ও জনসমর্থন বিবেচনা করে আবারও বেনজির আহমেদ টিটোকেই কালিহাতীর মাঠে দেখতে পাবে।
মন্তব্য করুন