শুক্রবার
০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অর্ধকোটি টাকায় নির্মিত সেতুতে নেই সংযোগ সড়ক, চরম দুর্ভোগ

‎কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:১৮ পিএম
অর্ধকোটি টাকায় নির্মিত সেতু
expand
অর্ধকোটি টাকায় নির্মিত সেতু

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের দক্ষিণ খরখরিয়া সাব বাঁধ এলাকায় প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি সেতু সংযোগ সড়ক না থাকায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। ফলে শতাধিক পরিবার দীর্ঘদিন ধরে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে। বিশেষ করে স্কুলশিক্ষার্থী, নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের দৈনন্দিন চলাচলে দুর্ভোগের যেন শেষ নেই।

‎স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের আওতায় ৪২ লাখ ৬৩ হাজার ৯০৭ টাকা ব্যয়ে ১১ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণ করা হয়। কাজটি সম্পন্ন করে কুড়িগ্রাম সদরের কাঁঠালবাড়ি এলাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণ শেষে চলতি বিল উত্তোলন করলেও সংযোগ সড়কের মাটি ভরাট ও রাস্তা সংস্কার কাজ সম্পূর্ণ না করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ ফেলে দেয়। এরপর ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে সেতুটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। ‎ ‎স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ওই পথে ছোট-বড় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এমনকি পায়ে হেঁটে কিংবা বাইসাইকেল বা রিকশায় করেও চলাচল করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে স্থানীয়দের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে রোগী পরিবহন, স্কুলে যাওয়া, বাজারে আসা-যাওয়ায় মারাত্মক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রায় দেড়শ পরিবারের বাসিন্দাদের। ‎ ‎দক্ষিণ খরখরিয়া এলাকার বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, “বছরখানেক আগে সেতুর কাজ শেষ হইছে। কিন্তু মাটি ভরাট না করায় আমরা এখনো সেতু ব্যবহার করতে পারতেছি না। চারদিকে গর্ত আর কাদা পানি জমে থাকে। কেউ কিছু করে না, কারও কোনো মাথাব্যথা নাই।” ‎ ‎আরেক স্থানীয় নুরনবী বলেন,“সরকার এত টাকা খরচ করে সেতু বানাইছে, কিন্তু সংযোগ সড়ক না থাকলে মানুষ চলবে কেমনে? সামনে গর্ত, পিছনে পানি বড় বিপদে আছি।” ‎ ‎স্থানীয় নারী বিলকিস বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সেতু হইছে, কিন্তু আমরা সেতুর নিচ দিয়ে যাই। বৃষ্টি হইলে আরও কষ্ট। বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না, গাড়িও চলে না। সরকার যেন দ্রুত এই সড়কটা ঠিক করে দেয়।” ‎ ‎চিলমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. সোহেল রহমান বলেন, “সেতুর কাজ শেষ হওয়ার পরপরই বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছিল, তাই তখন মাটি পাওয়া যায়নি। এ কারণে সংযোগ সড়কের কাজ স্থগিত রাখতে হয়। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মাটি ভরাট করে সেতুটি সম্পূর্ণ যাতায়াতযোগ্য করে তোলা হবে।” ‎ ‎তবে স্থানীয়দের দাবি, চলতি বছর চিলমারীতে বৃষ্টিপাত বিগত কয়েক বছরের তুলনায় কম হলেও সংযোগ সড়কের কাজ না হওয়া প্রশাসনিক উদাসীনতারই প্রমাণ। সময়মতো সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় কোটি টাকার সরকারি প্রকল্পটি এখন “অব্যবহৃত অবকাঠামোর আরেক নিদর্শন” হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‎ ‎স্থানীয়রা দ্রুত সংযোগ সড়কের কাজ সম্পন্ন করে সেতুটি ব্যবহারের উপযোগী করার দাবি জানিয়েছেন, যাতে এলাকার মানুষ চলাচলের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পায়।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন