

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


সময়ের তালে পাল্টে গেছে মানুষের জীবনযাত্রা, এসেছে নানা রকম পরিবর্তন। একটা সময় ছিল যখন আদালত পাড়ার অবিচ্ছিদ্ধ অংশ ছিল টাইপ রাইটাদের ছন্দময় ঠক ঠক শব্দ। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় আর কম্পিউটারের সহজলভ্যতায় সেই টাইপ মেশিনগুলো আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিস্টোফার শোলস্ নামে এক যন্ত্রপ্রকৌশলী ১৮৬৬ সালে প্রথম টাইপ রাইটার নির্মাণ করেন। এবং এটির উন্নয়নে নিয়মিত গবেষণা করে পরবর্তীতে তা বাজারজাত করেন। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে শোলস্ অ্যান্ড গ্লিডেনস্ ব্র্যান্ডের প্রথম টাইপ রাইটার বাজারজাত করা হয় ১৮৭৪ সালে। পরবর্তীতে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের সকল অফিস আদালতে বাণিজ্যিক পর্যায়ে জায়গা দখল করে নেয় টাইপ মেশিন।
রোববার (২ নভেম্বর) সকালে কুষ্টিয়া আদালত চত্বরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের দক্ষিণ দিকে পুলিশের মালখানা ঘরের বারান্দায় টেবিল ও চেয়ার নিয়ে দুইজন টাইপ রাইটার বসে ছন্দময় শব্দে টাইপ মেশিনে ঝড় তুলে বুনে যাচ্ছেন বাংলা ও ইংরেজি শব্দের মালা। এক সময় এখানেই ২৫-৩৯ জন টাইপ রাইটার ছিলেন। তবে বর্তমান কম্পিউটারের যুগে টাইপ মেশিনে মামলা বা মোকর্দ্দমার আরজী আর লেখা হয় না। তাই এক প্রকার বেকার হয়ে গেছেন টাইপরাইটাররা। এদিকে, জীবনের তাগিদে টাইপরাইটারদের অনেকে আবার স্বউদ্যেগে কম্পিইটার শিখে পরিবর্তন করেছেন কাজের ধরন।
টাইপ রাইটার জামাল তিনি কি-বোর্ডের বোতামে অনর্গল দু'হাতে চাপ দিচ্ছেন,ছাপা অক্ষরের মত লেখা উঠছে কাগজে।ঠক ঠক শব্দে আওয়াজ তুলে চলেছে টাইপ মেশিন। একটু পড় পড় হাত দিয়ে টেনে দিচ্ছেন লোহার হাতলের মতো অংশটি।এতে যন্ত্রটির সেলফ নিচে নেমে লেখা শুরু হচ্ছে পরের লাইন থেকে।
কাজ করতে করতে তিনি এনপিবি নিউজকে বলেন,"১৯৯৫ সাল থেকে তিনি আদালত চত্বরে টাইপ মেশিনের কাজ করছেন। সে সময় টাইপিং কাজের জন্য সিরিয়াল দেওয়া লাগতো। এখন তা শুধুই স্মৃতি।পড়াশোনার পাশাপাশি আস্তে আস্তে তিনি এ কাজে জড়িয়ে পড়েন।সেখানে আজ প্রায় ৩০ বছর এ পেশায় রয়েছেন। ওই সময় কাজ ভালো হতো,ভালো আয় হতো। তবে এখন তা আর হয় না। বেশিরভাগ অলস সময় পার করতে হয়। আধুনিক যুগে এখন তেমন একটা কাজ নেই বললেই চলে। স্বল্প আয়ে পরিবার চালাতেও কষ্ট হয়। তবুও পুরোনো এই পেশা ধরে রেখেছেন তিনি।"
এ বিষয়ে আব্দুল মোমিন নামে এক মহুরী বলেন, "আগে এই টাইপ মেশিনের অনেক কদর ছিল। কাজ করার জন্য অনেক সিরিয়াল দেওয়া লাগতো। অনেক সময়ে সময়মত কাজ পেতাম না এ নিয়ে তাদের সাথে অনেক কথাকাটাটি হয়েছে। সেসব দিনের কথা এখন মনে পড়ে। তবে কাজ ভুল হলে আবারও নতুন করে করা লাগতো। ছিল না কোন সংশোধনের ব্যবস্থা।"
এ্যাডভোকেট এনামুল হক বলেন,"সে সময় বিশেষ করে কোর্টে মামলার প্রস্তুতির জন্য টাইপিং কাজ গুরুত্ব দেওয়া হত। অসুবিধা বলতে টাইপ মেশিনে একবার কাজ হলে সেটি সংশোধনের কোন ব্যবস্থা ছিল না পুনরায় আবারও টাইপ করা করতে হতো। এতে অনেক সময় লাগতো। অনেক সময় অক্ষর গুলো ভালো বোঝা যেত না। বর্তমান যুগে কম্পিউটার এসে টাইপিংকে আরও গতিশীল করেছে। লেখার ফন্ট অনেক ভালো স্পষ্ট বোঝায় যায়। ভুল হলে তা মুহুর্তের মধ্যে সংশোধন করে পুনরায় প্রিন্ট করা যায়। তবুও পুরোনো এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখা উচিত বলে মনে করেন এই আইনজীবী।"
কালের বিবর্তনে টাইপ রাইটারের সেই চিরচেনা ঠক ঠক শব্দটি হারিয়ে গেলেও এর সাথে জড়িত থাকা মানুষগুলোর জীবিকা প্রশ্নটি এখনো অমীমাংসিত। প্রযুক্তির এই জয়যাত্রায় তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং নতুন পথে চলার দিশা দেখানো এখন সময়ের দাবি। পুরোনো এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন সচেতন মহল।
মন্তব্য করুন