

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ময়মনসিংহের ভালুকায় শিল্প কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশ্রিত রঙের পানির কারণে ৩ শ ৩৬ একর জমিতে বোরো আবাদ বন্ধ থাকায় কৃষকের প্রায় ৩৩ কোটি ২৮ লাখ ১০ হাজার টাকার ধান উৎপাদন ব্যহত হয়েছে বলে এক তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে।
খাল-বিলে প্রতি নিয়ত বিষাক্ত বর্জ্য পানি জমে থাকায় দেশীয় মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণীর বিলুপ্তি ও দুর্গন্ধ বাতাস ছড়ানোয় জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পরলেও প্রতিকার মিলছে না কোন ভাবেই। এসব কেমিক্যাল যুক্ত কালো পানি ফসলি জমিতে ব্যবহার করে কৃষকরা বোরো আবাদ করতে গিয়ে শরীরে চুলকানিসহ নানা চর্ম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
সচেতন নাগরিকরা বলছে, ভরাডোবা এলাকার কতিপয় স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির মদতপৃষ্ট হয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের ইচ্ছামত স্থানীয় খাল-বিলে বর্জ্য ফেলে কৃষকের ফসল নষ্টসহ পরিবেশ ধ্বংস করেছে। পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ ব্যয়িত প্রায়ই এলাকার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।
ভরাডোবা ইউনিয়নে এক্সপেরিয়েন্স টেক্সটাইল (পাকিস্তানি মিল), হ্যারি ফ্যাশনের কেমিক্যাল মিশ্রিত রঙের পানি ও মুলতাজিম স্পিনিং মিল লিমিটেডের গরুর খামারের গোবর ও অন্যান্য বর্জ্যের কারণে ভরাডোবা, পুরুড়া, রাংচাপড়া ও ভাটগাঁও মৌজায় কৃষকের শত শত একর জমির ফসল নষ্ট হওয়ায় বোরো আবাদ বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
ডিমাইল পাড়ার এক চাষী জানান, বিলের কালো কিচকিচে পানিতে নামলে শরীরে আলকাতারার মত লেগে চুলকাতে থাকে। ধান রোপন করলে গোছা বড় হয়ে গোড়া পচে ধান গাছ মরে যায়। দীর্ঘদিন কালো পানিতে বিলে কচুরিপানায় ছেয়ে গেছে। বর্জ্য পানির বিষাক্ত দুর্গন্ধে বাড়ি ঘরে টিকে থাকা দুর্বিষহ হয়ে যায়। বর্জ্য পানি বন্ধের দাবিতে এলাকার শত শত কৃষক প্রতিবাদ, আন্দোলন করে বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েও স্থানীয় সমাধান পাননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভরাডোবা গ্রামের এক কৃষক জানান, দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানি ও মুলতাজিম মিলের দূষিত পানি বিলে নেমে তাদের বোরো জমি তলিয়ে থাকায় আবাদ করতে পারছেন না। অপরদিকে বর্জ্য মিশ্রিত দূষিত কালো পানি নিচের স্তরে গভীরে নলকূপের পানির সাথে মিশে খাবার পানি অনিরাপদ হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শিল্প কারখানার বর্জ্য মিশ্রিত পানি এলাকার কৃষকের শত শত একর জমির ফসল নষ্ট করছে। বর্জের কারণে দীর্ঘদিন ধরে কৃষকের বোরো আবাদ বন্ধ রয়েছে। এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পক্ষ থেকে বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আনা হয়।
স্থানীয় কারখানার কেমিক্যাল বর্জ্যে গত ১৫ বছরে ভালুকা উপজেলার ভরাডোবা ইউনিয়নে চারটি কৃষি ব্লকের ৩৩৫ শতাংশ ৭৪ ফসলি জমির প্রায় ৩৩ কোটি ২৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চারটি গণশুনানিতে বিষয়টি উঠে আসে।
চলতি বছরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে প্রধান করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, মৎস্য কর্মকর্তা, সমাজ সেবা কর্মকর্তা, চারটি কারখানার প্রতিনিধি ও কৃষক প্রতিনিধি রুহুল আমিনসহ একটি তদন্ত কমিটি করে দেন। কমিটির মাধ্যমে উপজেলার পরিষদ সভাকক্ষে গত ৯ জুলাই, ১৩ আগস্ট, ২৭ আগস্ট এবং ১০ সেপ্টেম্বর চার দফায় গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
গণশুনানিতে মোট ৩৩৫ দশমিক ৭৪ একর কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। এতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩৩ কোটি ২৮ লাখ ১০ হাজার টাকা। পরে তদন্ত কমিটির দেওয়া সুপারিশে কৃষকের মোট আর্থিক ক্ষতির ৭৫ শতাংশ টাকা এক্সপেরিয়েন্স টেক্সটাইল (পাকিস্তানি মিল) এবং ২৫ শতাংশ টাকা মুলতাজিম স্পিনিং কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করবেন। কৃষকদের ক্ষতিপূরণের টাকা কারখানা কর্তৃপক্ষ পরিশোধ না করায় তারা পুনরায় গত ২৯ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান।
ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে বিষয়টি ফায়সালা করার চেষ্টা চলছে। এতে সম্ভব না হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
মন্তব্য করুন