শনিবার
০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শনিবার
০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দীর্ঘ ৯ মাস পর উন্মুক্ত সেন্ট মার্টিন, নভেম্বরজুড়ে রাতযাপন নিষিদ্ধ

শহিদুল ইসলাম, উখিয়া-টেকনাফ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৫৩ এএম
দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ পর্যটন কেন্দ্র সেন্টমার্টিনের কয়েকটি অপরূপ সৌন্দর্যের চিত্র
expand
দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ পর্যটন কেন্দ্র সেন্টমার্টিনের কয়েকটি অপরূপ সৌন্দর্যের চিত্র

দীর্ঘ নয় মাস পর অবশেষে উন্মুক্ত হলো দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। পরিবেশ রক্ষায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আজ (১ নভেম্বর) থেকে দ্বীপে পুনরায় পর্যটক যাতায়াত শুরু হয়েছে।

তবে নভেম্বর মাসজুড়ে শুধুমাত্র দিনের বেলায় ভ্রমণের অনুমতি থাকায় প্রথম দিনেই পর্যটকদের তেমন সাড়া মেলেনি। এ রিপোর্ট লেখাকালীন পর্যন্ত জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে দ্বীপে রাত্রীযাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। পরবর্তীতে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে সীমিত পরিসরে রাত যাপনের অনুমতি দেওয়া হবে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটককে দ্বীপে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

আজ সকালে কক্সবাজারের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে ‘কর্ণফুলী এক্সপ্রেস’ ও ‘বার আউলিয়া’ নামের দুটি যাত্রীবাহী জাহাজ ছাড়ার কথা থাকলেও, পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় তা চালু হয়নি। ফলে সেন্ট মার্টিন নৌ-রুটে জাহাজ চলাচল আপাতত স্থগিত ঘোষণা করেছে মালিক সমিতি।

স্কোয়াব এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর বলেন,রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ থাকায় কেউ যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। কক্সবাজার থেকে গিয়ে বিকেলেই ফিরতে হবে- এতে দ্বীপে ঘোরার সময়ই পাওয়া যায় না। তাই আপাতত জাহাজ চালানো হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন,ইনানী ঘাট থেকে ছাড়ার অনুমতি পেলে যাতায়াতের সময় কিছুটা কমানো যেত। এখন দীর্ঘ সাগরপথ পাড়ি দিয়ে পর্যটকরা কেন সেখানে যাবেন?

ক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন,সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আজ থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটক যাতায়াত উন্মুক্ত করা হয়েছে। এবারে টেকনাফ নয়, সরাসরি কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি জানান, যাতায়াত ও পরিবেশ সংরক্ষণে সরকারি নির্দেশনাগুলো কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী, সেন্ট মার্টিনে যেতে হলে প্রত্যেক পর্যটককে অনলাইনে অনুমোদিত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টিকিট ও ট্রাভেল পাস সংগ্রহ করতে হবে। প্রতিটি টিকিটে থাকবে কিউআর কোড, যা প্রবেশের সময় স্ক্যান করে যাচাই করা হবে। কিউআর কোডবিহীন টিকিটকে নকল হিসেবে গণ্য করা হবে।

তবে ট্যুরিজম বোর্ডের নিবন্ধন সফটওয়্যার এখনো পুরোপুরি কার্যকর নয় বলে জানিয়েছেন সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর। তিনি বলেন,

সফটওয়্যার পুরোপুরি চালু না হলে যাত্রী নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় জটিলতা তৈরি হতে পারে।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন,সেন্ট মার্টিনে সরকারের জারি করা নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন।

পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, দ্বীপে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, প্লাস্টিক ব্যবহার, প্রবাল সংগ্রহ ও অননুমোদিত স্থাপনা নির্মাণে কঠোর নজরদারি থাকবে।

স্কোয়াব সভাপতি তোফায়েল আহম্মদ সরকারের নীতির সমালোচনা করে বলেন,এভাবে কড়াকড়ি করে সেন্ট মার্টিনবাসীর মৌলিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। পর্যটক না গেলে স্থানীয়দের জীবিকা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এটা পর্যটন নয়, তামাশা।

পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে ২০২৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ ঘোষণা করা হয়। প্রায় নয় মাস পর, নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসের জন্য পর্যটন পুনরায় চালুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

তবে ভ্রমণকারীদের মানতে হবে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের জারি করা ১২টি নির্দেশনা, যার মধ্যে রয়েছে বর্জ্য ফেলা নিষিদ্ধ, প্রবাল স্পর্শ বা সংগ্রহে নিষেধাজ্ঞা, এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দ্বীপ ত্যাগের বাধ্যবাধকতা।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন