শনিবার
০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শনিবার
০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শেষ হলো শেরপুরের খ্রিষ্টভক্তদের দু'দিনের তীর্থ উৎসব

শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:২৪ পিএম
expand
শেষ হলো শেরপুরের খ্রিষ্টভক্তদের দু'দিনের তীর্থ উৎসব

শেরপুরের নালিতাবাড়ীর বারমারী সাধু লিওর খ্রিষ্টান ধর্মপল্লীতে দুইদিনব্যাপী ফাতেমা রাণীর তীর্থ উৎসব শেষ হয়েছে।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে মহা খ্রীষ্টযাগের (প্রার্থনা) মধ্য দিয়ে শুরু হয় দুইদিনের ক্যাথলিকদের এই উৎসব।

এবারের মূলভাব ছিল 'আশার তীর্থযাত্রা; ফাতেমা রাণী মা মারিয়া, বারমারী'। উৎসবে দেশ-বিদেশের প্রায় ৩৫ হাজার রোমান ক্যাথলিক খ্রীষ্টভক্তরা অংশ নেয়।

ময়মনসিংহ ধর্মপল্লীর পালপুরহিত বিশপ পনেন পল কুবি সিএসসি জানান, ১৯৪২ সালে ফাদার মার্কস বারমারী মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৮ সালে ময়মনসিংহ ধর্ম প্রদেশ বারমারী মিশনকে ধর্মপল্লী হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে পর্তুগালের ফাতেমা নগরীর আদলে ফাতেমা রাণীর তীর্থস্থান স্থাপন করা হয়। প্রতি বছর অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহের বৃহস্পতি ও শুক্রবার এই ক্যাথলিক তীর্থ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এবারও আশার তীর্থযাত্রাকে মূল সুরে উদযাপন করা হয়েছে। তিনি জেলা প্রশাসন ও পুলিশের সহায়তার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এবারের উৎসবে বিশ্ব মানবতার কল্যাণ, বিশেষ করে বাংলাদেশের শান্তি ও সকল সমস্যার সমাধানের জন্য তীর্থযাত্রায় প্রার্থনা করা হয়।

আয়োজক কমিটি জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর গারো পাহাড়ের বারমারী সাধু লিওর খ্রিষ্টান ধর্মপল্লীতে পূর্ণ মিলন, পাপ স্বীকার ও বিকেলে পবিত্র খ্রীষ্টযাগের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ তীর্থ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। পরে রাতে আলোক শোভাযাত্রা, আরাধনা, ব্যক্তিগত প্রার্থনা, নিরাময় অনুষ্ঠান ও নিশি জাগরন অনুষ্ঠিত হয়। আর শুক্রবার সকালে জীবন্ত কুশের পথ ও মহা খ্রীষ্টযাগের মধ্য দিয়ে দুইদিনের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান শেষ হয়।

দেশ-বিদেশ থেকে আগত খ্রীষ্টভক্তরা নিজেদের পাপ মোচনের জন্য মোম জ্বালিয়ে আলোর মিছিলে অংশ নেন। প্রায় দেড় কিলোমিটার পাহাড়ি ক্রুশের পথ অতিক্রম শেষে মা মারিয়ার প্রতিকৃতির সামনে সমবেত হয়ে ভক্তরা শ্রদ্ধা জানান, অকৃপণ সাহায্য দেন এবং ভালো ফলাফল, লেখাপড়া সহজ হওয়া ও নিজের মনের বাসনা পূরণের জন্য প্রার্থনা করেন।

তীর্থযাত্রী নকরেক বলেন, প্রতি বছর এখানে আসি। মা মারিয়ার কাছে প্রার্থনা করি। মূলত মা মারিয়ার কাছে সকল চাওয়া পাওয়া ও মানত করতে এখানে আসেন বিভিন্ন লোকজন। আমাদের বিশ্বাস, মা মারিয়ার কাছে কিছু চাইলে তা পাওয়া যায়। মোমবাতি হাতে নিয়ে পুরো তীর্থস্থান ঘুরে মা মারিয়ার কাছে আমাদের আশা জানাই। আমাদের মানত পূরণ করেন মা মারিয়া। এজন্য এখানর আসি আমরা।

ভক্তদের বিশ্বাস, মা মারিয়া তাদের সব চাওয়া পূরণ ও সমস্যার সমাধান করেন। তাই শিশু, যুবক ও বৃদ্ধরা প্রতিবছর এই তীর্থে ছুটে আসেন। দীর্ঘ ২৫ বছর পর এবার জুবিলি উৎসব উদযাপন করা হয় এবং এ উপলক্ষে একটি মেলা বসানো হয়েছিল।

জেলা পুলিশ সুপার মো: আমিনুল ইসলাম জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তীর্থ উৎসব সম্পন্ন করতে তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত ছিলো। পাশাপাশি বিজিবি সবসময় টহলে ছিল। কোথাও কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়াই এবারের তীর্থ উৎসব শেষ হয়েছে।

জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, উৎসবটি দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। হাজার হাজার খ্রীষ্টভক্ত এখানে এসেছেন। খ্রিষ্টানদের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মের মানুষও উৎসব দেখার জন্য এসেছেন। পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় ছিল এবং নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বদা তৎপর ছিল।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন