শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আমতলীতে স্কুল শিক্ষক অপহরণের অভিযোগ

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৫১ পিএম
আমতলীতে স্কুল শিক্ষক অপহরণ
expand
আমতলীতে স্কুল শিক্ষক অপহরণ

বরগুনার আমতলী উপজেলার চরকগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলামকে অপহরণ করে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় যুবলীগ সদস্য মিজানুর রহমান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। নির্যাতনের সময় শিক্ষক পানি চাইলে তাঁকে প্রস্রাব খাইয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী।

এ ঘটনায় সাত দিন পর গত সোমবার রাতে শিক্ষক রফিকুল ইসলাম আমতলী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মঙ্গলবার পুলিশ তাঁর মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ২১ অক্টোবর রাতে।

জানা গেছে, বরগুনা সদর উপজেলার ধুপতী গ্রামের ইউনুস আলী মীরের ছেলে রফিকুল ইসলাম ২০১৫ সালে চরকগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগ দেন। বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই যুবলীগ সদস্য মিজানুর রহমান তাঁর কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় তিনি বিভিন্নভাবে শিক্ষককে হয়রানি করে আসছিলেন।

২১ অক্টোবর রাতে সন্ত্রাসী মিজানুর রহমান, আবুল কালাম আজাদ (নয়া তালুকদার)সহ একাধিক সহযোগী বিদ্যালয়ের হোস্টেল থেকে রফিকুল ইসলামকে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে অপহরণ করে। তাঁকে ঘোপখালী এলাকার একটি কলা বাগানে নিয়ে লোহার রড দিয়ে রাতভর নির্যাতন চালানো হয়।

নির্যাতনের একপর্যায়ে রফিকুল পানি চাইলে সন্ত্রাসীরা তাকে প্রস্রাব খাইয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। পরে তাঁকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দিতে বলা হয়। অস্বীকৃতি জানালে পুনরায় নির্যাতন করা হয়।

অসহ্য যন্ত্রণায় রফিকুল জানান, তাঁর সোনালী ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৮১ হাজার টাকা আছে। এরপর সন্ত্রাসীরা তাঁর কাছ থেকে এটিএম কার্ড ও পিন নম্বর নিয়ে ৮০ হাজার টাকা তুলে নেয়।

রাতভর নির্যাতনের পর তাঁকে অচেতন অবস্থায় বিদ্যালয় হোস্টেলের সামনে ফেলে রেখে যায়। সন্ত্রাসীরা তাঁর কক্ষ থেকে একটি ল্যাপটপ ও মোটরসাইকেলও নিয়ে যায়।

২২ অক্টোবর সকালে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে চিকিৎসকরা তাঁকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) প্রেরণ করেন।

ঘটনার এক সপ্তাহ পর রফিকুল ইসলাম মিজানুর রহমানকে প্রধান আসামি করে চারজনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা ও চাঁদাবাজির মামলা করেন। অন্যান্য আসামি হলেন — আবুল কালাম আজাদ (নয়া মিয়া), তোতা তালুকদার ও সেলিম তালুকদার।

ভুক্তভোগী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, চাকরি নেওয়ার পর থেকেই মিজান চাঁদা দাবি করে আসছিল। টাকা না দেওয়ায় আমাকে তুলে নিয়ে রাতভর নির্যাতন করে। পানি চাইলে প্রস্রাব খাইয়ে দেয়। আমি তাদের কঠোর শাস্তি চাই।

চরকগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আমার সহকারী শিক্ষককে অপহরণ করে অমানবিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রাশেদ মাহমুদ রোকনুজ্জামান বলেন, আহত শিক্ষকের চোখ, মুখমণ্ডল ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন রয়েছে। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালে পাঠানো হয়।

আমতলী থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, মামলা হয়েছে। ভুক্তভোগীর মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন