

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


সংসদীয় আসনগুলোতে যাচাই-বাছাই শেষে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। পোস্টার সাঁটানো নিষিদ্ধ থাকায় মিছিল-মিটিংয়ের পাশাপাশি ব্যানার, ফেস্টুন ও লিফলেট বিতরণই এখন প্রচারণার প্রধান মাধ্যম। কুমিল্লা–১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনেও জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারণা।
ধানের শীষ, দাঁড়িপাল্লা, হাতপাখা ও ট্রাক প্রতীকের প্রার্থীদের প্রচারণা নজর কাড়লেও সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ৪২ কিলোমিটার এলাকায় সড়ক বিভাজকের গাছে ঝুলানো ফেস্টুন।
মহাসড়কের সৌন্দর্যবর্ধনে লাগানো বকুল, কাঞ্চন, করবী, গন্ধরাজ, রাধাচূড়া, হৈমন্তী, টগর, সোনালু, কৃষ্ণচূড়া, কদম, পলাশসহ নানা ফুলগাছ এবং জলপাই, অর্জুন, কাঁঠাল, মেহগনি, শিশু, আকাশমণি, নিম, একাশিয়া, হরীতকীসহ বিভিন্ন জাতের গাছে বড় বড় লোহার পেরেক ঠুকে লাগানো হয়েছে নির্বাচনী ফেস্টুন। বাতাসে যাতে ফেস্টুন উড়ে না যায়, সে জন্য উপর-নিচ দুই পাশেই পেরেক মেরে শক্ত করে বাঁধা হয়েছে। ভোটারদের সুবিধার কথা বলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম—দুই দিকমুখী ফেস্টুনও ঝুলানো হয়েছে। বাদ পড়েনি ছোট ফুলগাছগুলোও।
পরিবেশবিদদের ভাষ্য, গাছে পেরেক মারলে সেখানে মরিচা ধরে। এর মাধ্যমে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে গাছের নানা রোগ সৃষ্টি হয়। এতে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং ঝড়-বৃষ্টিতে সহজেই গাছ ভেঙে পড়ার ঝুঁকি বাড়ে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লার সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, ‘এ ধরনের ব্যানার-ফেস্টুন গাড়িচালকদের দৃষ্টিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়। একই সঙ্গে গাছে পেরেক মেরে ফেস্টুন ঝুলানো স্পষ্টভাবে নির্বাচনী আইন ও পরিবেশ সুরক্ষার নীতির লঙ্ঘন। পরিবেশ নষ্ট করার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি।’ তিনি দ্রুত মহাসড়কের গাছ থেকে এসব ফেস্টুন অপসারণের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগকে আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলাম মোস্তফা খন্দকার বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছিলেন, গাছ সুরক্ষায় নতুন আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে এবং ওই আইনে গাছে পেরেক ঠুকে বিজ্ঞাপন দেওয়ার বিরুদ্ধে বিশেষ বিধান রাখা হবে। আইন কার্যকর হলে এ ধরনের কাজে জড়িতদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেছিলেন। তবে আইনটি প্রণয়ন হয়েছে কি না, তা জানা যায়নি। বাস্তবতা হলো—গাছে পেরেক মারার প্রবণতা কমেনি, বরং বেড়েছে।
নির্বাচনী বক্তৃতা ও প্রচারণায় প্রার্থীরা নিজেদের সদয় ও জনসেবায় নিবেদিত হিসেবে তুলে ধরছেন। কিন্তু সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য লাগানো গাছে পেরেক ঠুকে প্রচারণা চালানো—এই বাস্তবতা সেই বক্তব্যের সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সচেতন নাগরিকেরা।
মন্তব্য করুন
