

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জোহরান মামদানি। স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুওমোকে হারিয়ে ইতিহাস গড়েন ডেমোক্র্যাট পার্টি সমর্থিত এই রাজনীতিক।
নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা যায়, ৩৪ বছর বয়সী মামদানি পেয়েছেন ১০ লাখ ১৮ হাজারের বেশি ভোট, যা মোট ভোটের প্রায় ৫০ শতাংশ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুওমো পেয়েছেন ৮ লাখ ৪১ হাজারের মতো ভোট (৪১.৬%)। অপরদিকে রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া পান প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার ভোট (৭.১%)।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলে। বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী এটি বুধবার সকাল ৮টায় শেষ হয়। ভোট শেষ হওয়ার অল্প সময় পরই বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) মামদানির জয় নিশ্চিত করে।
নিউইয়র্ক সিটি বোর্ড অব ইলেকশন জানায়, এবার ভোটার উপস্থিতি ছিল রেকর্ড মাত্রা—১৯৮৯ সালের পর প্রথমবার ২০ লাখের বেশি ভোটার ভোট দিয়েছেন।
৮৪ লাখেরও বেশি মানুষের এই ব্যস্ত শহরে জোহরান মামদানি শুধু প্রথম মুসলিম নন, তিনিই প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এবং আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া নাগরিক যিনি মেয়রের আসনে বসছেন।
শহরের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ভোটাররা এই জয়কে কেবল ধর্ম বা জাতিগত পরিচয়ের বিজয় হিসেবে নয়, বরং জনগণের বাস্তব জীবনের সমস্যা বিশেষ করে ব্যয়বৃদ্ধি ও আবাসন সংকট নিয়ে তার স্পষ্ট অবস্থানের স্বীকৃতি হিসেবে দেখছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নির্বাচন ডেমোক্র্যাট পার্টির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সাবেক গভর্নর কুওমো ছিলেন ঐতিহ্যবাহী ধনবান দাতানির্ভর রাজনীতির প্রতীক, আর মামদানি নিজেকে পরিচয় দেন ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী’ হিসেবে যিনি তরুণ ভোটারদের মধ্যে প্রবল সমর্থন পেয়েছেন।
এনবিসি নিউজের এক্সিট পোল অনুযায়ী, মামদানি প্রায় সব জাতিগত গোষ্ঠীর কাছ থেকেই সমর্থন পেয়েছেন শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ, লাতিনো, এশীয়সহ বিভিন্ন কমিউনিটির বড় অংশ তার পক্ষে ভোট দিয়েছে। বিশেষ করে ৪৫ বছরের নিচের ভোটারদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা ছিল ব্যাপক; এই শ্রেণির ভোটে তিনি কুওমোর চেয়ে ৪৩ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন। তবে ৪৫ বছরের ঊর্ধ্ব ভোটারদের মধ্যে কুওমো ১০ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন।
শিক্ষাগত অবস্থান, শহরে বসবাসের সময়কাল ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যও ভোটে প্রভাব ফেলেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত ১০ বছরে নিউইয়র্কে আগত নতুন বাসিন্দা ও পুরনো বাসিন্দাদের ভোটাভ্যাসেও পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে।
এদিকে, মামদানির ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থান ও মুসলিম পরিচয় নির্বাচন চলাকালে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ইসরায়েলবিরোধী অবস্থানকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে প্রচারণা চললেও শেষ পর্যন্ত ভোটাররা তার পক্ষেই রায় দিয়েছেন। এক্সিট পোল অনুযায়ী, ইহুদি ভোটারদের মধ্যে কুওমো এগিয়ে থাকলেও (৬০%), মামদানি পান প্রায় ৩১ শতাংশ ইহুদি ভোট।
নিউইয়র্কের এই নির্বাচন শুধু শহরটির নয়, বরং মার্কিন রাজনীতির ভবিষ্যৎ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের দিকেও এক ঐতিহাসিক বার্তা দিয়েছে।
সূত্র: আলজাজিরা, এনবিসি নিউজ
মন্তব্য করুন
