

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ (এফবিআই) সম্প্রতি যে তদন্তসংক্রান্ত নথি প্রকাশ করেছে, তাতে কুখ্যাত অর্থকুবের জেফরি এপস্টেইনের যৌন নির্যাতন চক্রের ভেতরের চিত্র আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। নথিগুলোতে উঠে এসেছে, কীভাবে তিনি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের খুঁজে আনতেন এবং বাছাই করতেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানায়, এই নথিগুলো প্রকাশ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে শুরু হওয়া বিচার বিভাগের একটি দীর্ঘসূত্রিত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে। তবে ব্যাপক সম্পাদনা ও তথ্য গোপন রাখার কারণে প্রকাশনাটি সমালোচনারও মুখে পড়েছে।
প্রকাশিত নথির মধ্যে একটি বিশেষ নথি—ইএফটিএ–০০০০৪১৭৯—গুরুত্ব পাচ্ছে। এতে রয়েছে এফবিআইয়ের একটি প্রমাণসংক্রান্ত কভার শিট এবং ১৩ পৃষ্ঠার হাতে লেখা তদন্ত নোট। নোটগুলো ২০১৯ সালের ২ মে নেওয়া এক সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি, যদিও সাক্ষীর পরিচয় ও কিছু অংশ গোপন রাখা হয়েছে।
এই নথিতে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তরুণী ও অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের সংগ্রহ ছিল একটি সংগঠিত প্রক্রিয়া। সেখানে ‘ম্যাসাজ’-এর আড়ালে যৌন নির্যাতনের কথা উল্লেখ আছে, পাশাপাশি বয়স, শারীরিক গঠন ও গায়ের রং নিয়ে এপস্টেইনের নির্দিষ্ট পছন্দের কথাও উঠে এসেছে। নথিতে এপস্টেইনকে ‘জেই’ নামে উল্লেখ করা হয়েছে।
এক পর্যায়ে সাক্ষী জানান, মেয়ের সংকট তৈরি হলে ভিন্ন দেশ ও গোষ্ঠী থেকে কিশোরীদের আনার চেষ্টা করা হতো। তবে এপস্টেইন নিজে মেয়েদের চেহারা ও গায়ের রং নিয়ে আপত্তি তুলতেন এবং তাঁর পছন্দ অনুযায়ী না হলে তাদের ফিরিয়ে দিতে বলতেন।
নথিতে আরও বলা হয়, কিছু ক্ষেত্রে মেয়েদের বয়স যাচাই করতে এপস্টেইন নিজেই পরিচয়পত্র দেখতে চাইতেন। কারণ, তাঁর কাছে আনা কেউ কেউ বয়সে বেশি হওয়ায় তিনি আগের মতো ‘বিশ্বাস’ করতে পারছিলেন না—এমন মন্তব্যের কথাও নোটে রয়েছে।
সাক্ষীর বর্ণনায় এপস্টেইনের আচরণ ছিল ভয়াবহ ও অমানবিক। তদন্ত নথিতে কয়েকজন কিশোরীর ছবিও সংযুক্ত আছে, যাদের বয়স ১৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব ছবি নিউইয়র্কের বিভিন্ন স্থানে তোলা—যার মধ্যে রয়েছে ম্যানহাটনের একটি অ্যাপার্টমেন্ট, সৈকত এলাকা ও একটি হাইস্কুল অনুষ্ঠান।
সাক্ষীর নাম প্রকাশ না করা হলেও এসব তথ্য এপস্টেইনের বিরুদ্ধে আগের অভিযোগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ফেডারেল মামলায় ‘মাইনর ভিকটিম–১’ হিসেবে চিহ্নিত ব্রাজিলীয় বংশোদ্ভূত মারিনা লাসেরদা ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। তিনি জানান, কিশোর বয়স থেকেই তিনি এপস্টেইনের নির্যাতনের শিকার হন। গত বছর প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে এসে তিনি এসব অভিজ্ঞতার কথা বলেন।
লাসেরদার সাক্ষ্যের ভিত্তিতেই এপস্টেইনের বিরুদ্ধে ফেডারেল অভিযোগ গঠন করা হয়। তবে ২০১৯ সালে নিউইয়র্কের একটি কারাগারে বিচার শুরুর আগেই এপস্টেইনের মৃত্যু হয়।
এপস্টেইনের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মধ্যেও তদন্ত পৌঁছায়। তাঁর অর্থায়নে একটি মডেলিং এজেন্সি পরিচালনাকারী জ্যাঁ-লুক ব্রুনেল ২০২২ সালে ফ্রান্সে গ্রেপ্তার হন। তাঁর বিরুদ্ধে অপ্রাপ্তবয়স্কদের পাচার ও যৌন নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগ আনা হয়। তদন্ত অনুযায়ী, তিনি দীর্ঘ সময় ধরে এপস্টেইনের জন্য বিপুলসংখ্যক কিশোরী ও তরুণী সরবরাহ করেছিলেন।
এপস্টেইনের মৃত্যুর পর তাঁর আরেক সহযোগী ঘিসলেইন ম্যাক্সওয়েলের উপস্থিতিও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন এলাকায় লক্ষ্য করা যায় বলে তদন্তে উঠে আসে। পরবর্তীতে ব্রুনেল ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্যারিসের একটি কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন।
মন্তব্য করুন

