শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মধ্যপ্রাচ্যের নতুন অভিভাবক পাকিস্তান?

বৈশ্বিক নজর ইসলামাবাদের দিকে

এনপিবিনিউজ ডেস্ক
প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:০৮ পিএম আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:০৯ পিএম
মধ্যপ্রাচ্য
expand
মধ্যপ্রাচ্য

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আবারও দৃশ্যমান হচ্ছে ‘হার্ড পাওয়ার’-এর যুগ। এশিয়া থেকে ইউরোপ, আমেরিকা থেকে আফ্রিকা-সর্বত্রই আইনি কাঠামো, আন্তর্জাতিক নিয়ম এবং জাতিসংঘ প্রস্তাব অগ্রাহ্য হচ্ছে। আজকের ভূরাজনীতিতে প্রাধান্য পাচ্ছে সামরিক শক্তি, অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং প্রয়োজনে উভয়কেই ব্যবহারের দৃঢ়তা।

বিশ্ব শাসনব্যবস্থার প্রতি আস্থার ভাঙন স্পষ্ট। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের অব্যাহত দমননীতি চলছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সহায়তা, আধুনিক অস্ত্র ও নিরাপত্তা পরিষদে ভেটোর জোরে। ইউক্রেন-রাশিয়ার সংঘাত এখনো থামেনি। উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র একদিকে মিত্রের দাবি তোলে, অন্যদিকে ভিন্ন পথে হাঁটে। এমনকি ইসরায়েলের পরিকল্পিত হামলা সম্পর্কেও ওয়াশিংটন অবগত ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে, কিন্তু চুক্তিবদ্ধ মিত্র কাতারকে সতর্ক করেনি।

অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্বও বিভক্ত। রাশিয়াকে ঘিরে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। যেসব সমাজ একসময় অভিবাসীদের স্বাগত জানিয়েছিল, সেসব দেশ এখন ভেতর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছে, অশান্তিতে ভরছে।

এ প্রেক্ষাপটে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো নতুন নিরাপত্তা হুমকির মুখে। ইরান, সৌদি আরব, মিশর, কাতার, ইয়েমেন, পাকিস্তানসহ একাধিক দেশ ইসরায়েলের আগ্রাসনকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে। ভারতও দীর্ঘদিন ধরে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। কিন্তু ৭ মে পাকিস্তানের ওপর তাদের পরিকল্পিত হামলা ব্যর্থ হয়। ইসলামাবাদ তখন বহুমাত্রিক প্রতিরক্ষা কৌশল, বিমান শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রথমবারের মতো নিজস্ব সাইবার ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধ সক্ষমতা প্রদর্শন করে।

পরবর্তী মাসে ইরানের পাশে দাঁড়িয়ে পাকিস্তান কূটনৈতিক শক্তি প্রমাণ করে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তেহরানকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে মুসলিম বিশ্বে নতুন মর্যাদা অর্জন করে। মে-জুনের এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে দিয়েছে-আধুনিক বিশ্বে বলপ্রয়োগই রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু, আর পাকিস্তান সামরিক ও কূটনৈতিক দুই ক্ষেত্রেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে।

এই পরিবর্তনের পেছনে মূলত সেনাপ্রধান জেনারেল অসীম মুনিরের “আক্রমণাত্মক প্রতিরক্ষা নীতি” বড় ভূমিকা রাখছে। এর মূল ভিত্তি হচ্ছে শুধু প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান নয়, বরং প্রয়োজনে শক্তি প্রদর্শনের ইচ্ছা। কাশ্মীর থেকে ফিলিস্তিন পর্যন্ত পাকিস্তান প্রকাশ্যে জাতিসংঘ প্রস্তাব বাস্তবায়ন এবং ন্যায্য সমাধানের পক্ষে অবস্থান জোরালো করছে।

সম্প্রতি সৌদি আরবের সঙ্গে পাকিস্তানের স্ট্র্যাটেজিক মিউচুয়াল ডিফেন্স অ্যাগ্রিমেন্ট (এসএমডিএ) নতুন দিগন্ত খুলেছে। চুক্তির মূল ধারা-একটি দেশের ওপর আক্রমণ হলে তা উভয়ের ওপর আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হবে। এটি পাকিস্তানকে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা কাঠামোয় কেন্দ্রীয় শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করছে। কাতার, মিশর ও তুরস্কও একই ধরনের চুক্তিতে আগ্রহ দেখিয়েছে।

এখন প্রশ্ন উঠছে-পাকিস্তান কি সৌদি আরবকে পারমাণবিক সুরক্ষা দেবে? সরাসরি উত্তর এখনো আসেনি, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে পরিস্থিতি বিবেচনায় সেটি অস্বীকার করার সুযোগ কম। একইসঙ্গে এটি মার্কিন-সৌদি সম্পর্ককে প্রতিস্থাপন না করে বরং পরিপূরক করবে। এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের জটিল নিরাপত্তা প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান-সৌদি জোট একটি নতুন ভারসাম্য তৈরি করতে পারে।

চীনও এই প্রক্রিয়ায় সম্ভাব্য অংশীদার হতে যাচ্ছে। পাকিস্তান ও সৌদি আরবের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক এবং আধুনিক প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির কারণে বেইজিংয়ের সম্পৃক্ততা কেবল সময়ের ব্যাপার।

সব মিলিয়ে, বলপ্রয়োগের রাজনীতিতে বিশ্ব যখন নতুন অধ্যায় লিখছে, পাকিস্তান সেখানে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। সামরিক দিক থেকে দৃঢ়তা, কূটনীতিতে আত্মবিশ্বাস-উভয় ক্ষেত্রেই ইসলামাবাদ নতুন ভূমিকায় আবির্ভূত। এসএমডিএ-এর মাধ্যমে পাকিস্তান আর কেবল আঞ্চলিক শক্তি নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্য ও মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা প্রদানকারী শক্তি হিসেবে পুনরুত্থান ঘটাচ্ছে।

সূত্রঃ জিও টিভি

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন