

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ইউক্রেন যুদ্ধের চাপ, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও তরুণদের সন্তান নিতে অনীহার কারণে রাশিয়ায় ক্রমেই কমছে জন্মহার। এই পরিস্থিতিতে জনসংখ্যা বাড়াতে একের পর এক ব্যতিক্রমী পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে দেশটির সরকার।
সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে রাতের নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট বন্ধ রাখার প্রস্তাব। রাশিয়ার নীতিনির্ধারকদের ধারণা, এতে মানুষ স্ক্রিন থেকে দূরে থাকবে এবং পরিবারকে বেশি সময় দেবে।
লাইভ মিন্ট-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উন্নত বিশ্বে যখন জন্মহার কমছে, তখন রাশিয়া এই অপ্রচলিত উপায়ে জনসংখ্যা সংকট মোকাবিলার চেষ্টা করছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, রাতে ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা আনা হতে পারে।
প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অতিরিক্ত সময় কাটানোর কারণে মানুষের ঘুমের সমস্যা বাড়ছে। একই সঙ্গে কমছে দাম্পত্য সময় ও পারিবারিক যোগাযোগ, যা জন্মহারে প্রভাব ফেলছে।
সমর্থকদের মতে, রাতের স্ক্রিন নির্ভরতা কমলে দম্পতিরা একে অপরের সঙ্গে বেশি সময় কাটাবে। এর ফলে পারিবারিক সম্পর্ক দৃঢ় হবে এবং সন্তান নেওয়ার আগ্রহ বাড়তে পারে।
তবে এই প্রস্তাব নিয়ে সমালোচনাও কম নয়। সমালোচকরা বলছেন, জন্মহার কমার মূল কারণ ইন্টারনেট নয়। বরং বাড়তি জীবনযাত্রার ব্যয়, আবাসন সংকট, চাকরির অনিশ্চয়তা এবং সন্তানের লালন-পালনের খরচই মানুষকে সন্তান নিতে নিরুৎসাহিত করছে।
অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, রাতে কাজ করা মানুষ, অনলাইন শিক্ষার্থী, ফ্রিল্যান্সার কিংবা চিকিৎসকদের জন্য এই সিদ্ধান্ত কতটা বাস্তবসম্মত। রাষ্ট্রীয় নির্দেশে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা আবেগ তৈরি করা সম্ভব নয় বলেও মত দিয়েছেন তারা।
এদিকে জনসংখ্যা বাড়াতে আরও কিছু বিতর্কিত প্রস্তাবও আলোচনায় এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘মিনিস্ট্রি অব সেক্স’ গঠনের ভাবনা এবং সন্তান জন্ম দিলে আর্থিক ভাতা দেওয়ার সুপারিশ।
প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রথম সন্তান জন্ম দিলে পরিবারকে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার রুবল সহায়তা দেওয়া হতে পারে। পাশাপাশি বিয়ের পর প্রথম রাতে বিশেষ স্থানে সময় কাটানোর জন্য আর্থিক সহায়তার কথাও ভাবা হচ্ছে।
রুশ সরকার মাতৃত্বকালীন সুবিধার পাশাপাশি বাবাদের জন্যও বিশেষ সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। বর্তমানে দেশটিতে প্রসবকালীন এককালীন অর্থ, দীর্ঘ মাতৃত্বকালীন ছুটি ও পারিবারিক সহায়তা কর্মসূচি চালু রয়েছে।
এ ছাড়া ১০টির বেশি সন্তানের জন্ম দেওয়া নারীদের জন্য সোভিয়েত আমলের ‘মাদার হিরোইন’ পুরস্কার পুনরায় চালু করা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের শেষ দিকে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কর্মক্ষেত্রে মধ্যাহ্নভোজ বা কফি বিরতির সময় সন্তান নেওয়ার বিষয়ে মন্তব্য করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছিলেন।
রাশিয়ার পরিসংখ্যান সংস্থা রোসস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশটিতে মাত্র ১২ লাখ ২২ হাজার শিশুর জন্ম নথিভুক্ত হয়েছে। এটি ১৯৯৯ সালের পর সর্বনিম্ন।
২০১৪ সালের তুলনায় জন্মহার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে যাওয়ায় জনসংখ্যা সংকট এখন রাশিয়ার জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মন্তব্য করুন

