

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী–তানোর) আসনকে ঘিরে বিএনপির অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন এখন প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে প্রতিযোগিতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে ইতোমধ্যে দুজনের প্রাণহানি ঘটেছে।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বহুল উপস্থিতি এবং পরস্পরবিরোধী গ্রুপিংয়ে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। নির্বাচনের প্রাক্কালে এসব বিশৃঙ্খলা বিএনপির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনলেও, একই আসনে জামায়াত ইসলামী নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী সংগঠিতভাবে অগ্রসর হচ্ছে।
এক সময় এ আসনটিতে বিএনপির একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে দলটির প্রার্থী ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক এমপি নির্বাচিত হন।
২০১৯ সালে তার মৃত্যু হলে নেতৃত্বে শূন্যতা দেখা দেয়। বর্তমানে তার ভাই মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দীনসহ অন্তত আটজন মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে সক্রিয় রয়েছেন।
তাদের মধ্যে রয়েছেন ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন, শিল্পপতি সুলতানুল ইসলাম তারেক, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার, জিয়া পরিষদের নেতা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বিপ্লব, সাবেক নেতা কেএম জুয়েল, প্রবাসী শাহাদাত হোসেন শাহীন এবং ব্যারিস্টার আমিনুল হকের স্ত্রী আভা হক।
তবে গত ২৭ অক্টোবর গুলশান কার্যালয়ে সাক্ষাৎকারের জন্য কেবল তিনজনকে—মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দীন, ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন ও সুলতানুল ইসলাম তারেক—ডাকা হয়। এ সিদ্ধান্তের পর থেকেই বাকিদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়তে থাকে।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন আমিনুল হকের ভাই, সাবেক আইজিপি এম এনামুল হক। পরের তিনটি নির্বাচনেও ফারুক পরপর জয়ী হন।
এখন জুলাই অভ্যুত্থানের পর রাজশাহী–১ আসনটি পুনরুদ্ধারের আশা নিয়ে মাঠে নেমেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। কিন্তু নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে বিভাজন তীব্র হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, শরীফ উদ্দীন ও সুলতানুল ইসলাম তারেকের সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্বই সবচেয়ে তীব্র। একাধিক সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। ১১ মার্চ তানোরে বিএনপির ইফতার মাহফিলে শরীফ উদ্দীনকে প্রধান অতিথি হিসেবে বরণ করা নিয়ে সংঘর্ষে নিহত হন কর্মী গানিউল ইসলাম।
এর পর ২৭ মার্চ একই এলাকায় আরেক সংঘর্ষে কৃষক দল নেতা নেকশার আলীর মৃত্যু হয়। এছাড়া গত ডিসেম্বর থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কয়েক দফায় তাদের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত হওয়া ও পাল্টা মামলা দায়েরের ঘটনা ঘটে।
এই পরিস্থিতি নিয়ে মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দীন বলেন, মনোনয়নপ্রত্যাশী অনেক হলেও এটি কোনো সমস্যার বিষয় নয়। আমি বিশ্বাস করি, প্রার্থী ঘোষণা হলে সবাই একসঙ্গে কাজ করবে। আমার পক্ষ থেকে কোনো গ্রুপিং নেই।
অন্যদিকে শিল্পপতি সুলতানুল ইসলাম তারেক বলেন, বিএনপি বড় দল, প্রতিযোগিতা থাকাটাই স্বাভাবিক। কিছু জায়গায় সংঘর্ষ ঘটলেও আমরা তারেক রহমানের নির্দেশে সংঘাত এড়িয়ে চলছি।
প্রার্থী ঘোষণার পর সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। তিনি আরও দাবি করেন, ভোটের মাঠে বিএনপির জনসমর্থন জামায়াতের তুলনায় অন্তত এক-তৃতীয়াংশ বেশি।
অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশী ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন নিজের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, যিনি দুঃসময়ে দল ও কর্মীদের পাশে ছিলেন, উন্নয়ন ভাবনায় বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ নিতে পারেন—মনোনয়ন তারই প্রাপ্য। বোর্ড এসব বিষয় মাথায় রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
এবারও ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে তাকেই প্রার্থী করেছে দল। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি মাঠে সক্রিয় থেকে এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ ও সাংগঠনিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি এলাকার মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণ এবারও তাঁকেই প্রাধান্য দেবেন। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, রাজশাহী–১ আসনে বিএনপি এখন নিজেদের অভ্যন্তরীণ সংকটে জর্জরিত।
মন্তব্য করুন
