

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নিরঙ্কুশ জয় শিক্ষাঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকের মতে, তাদের ‘ইমেজ’ এবং দীর্ঘমেয়াদি সাংগঠনিক প্রস্তুতি এই সাফল্যের মূল কারণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও সাবেক ছাত্রনেতার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, অন্য ছাত্রসংগঠনগুলো প্রার্থীদের সঠিকভাবে শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়। ছাত্রদল এবং বাম সংগঠনগুলোর প্রচার প্রচেষ্টা তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। তুলনামূলকভাবে শিবিরের প্রার্থীরা ধারাবাহিক ও ইতিবাচক প্রচারণা চালাতে সক্ষম হন।
দীর্ঘ প্রস্তুতির ফল
ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের মতে, জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকেই শিবির ধারাবাহিকভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে। প্রতিটি হল, অনুষদ এবং আশপাশের ছাত্রাবাসে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। প্রায় এক বছর ধরে এই প্রচেষ্টা চালানোয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে তারা ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করতে পেরেছে।
অন্যদিকে ছাত্রদল অনেক দেরিতে প্যানেল ঘোষণা করে। প্রার্থী নির্বাচনে বিতর্ক ছিল, ফলে তাদের প্রচার কার্যক্রম নড়বড়ে হয়ে পড়ে। স্বতন্ত্র ও বাম সংগঠনগুলোও ভোটারদের আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হয়।
সাংগঠনিক দক্ষতা ও ইতিবাচক ভাবমূর্তি
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শিবির দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে সাংগঠনিকভাবে নিজেদের জায়গা শক্ত করেছে। তাদের সদস্যরা ক্যারিয়ারভিত্তিক কাজ, পড়াশোনায় মনোযোগ এবং ভদ্র আচরণের কারণে শিক্ষার্থীদের কাছে আলাদা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। চাঁদাবাজি বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলনামূলকভাবে কম। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিকল্প হিসেবে শিবিরকেই বেছে নিয়েছে।
বিশেষ করে ছাত্রীদের ভোট এবার শিবিরের জয়কে আরও এগিয়ে নিয়েছে। ইসলামী ছাত্রী সংস্থার মাধ্যমে মেয়েদের সংগঠিত করা এবং পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
রাজনৈতিক বাস্তবতা ও শিক্ষার্থীদের মনোভাব
লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মোসলেহ উদ্দিন মনে করেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন সরকারি দলের ছাত্রসংগঠনের সন্ত্রাস ও আধিপত্য প্রত্যক্ষ করেছে। এর ফলে তারা পরিবর্তন চেয়েছিল। শিবির সেই শূন্যস্থান কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছে।
তার মতে, ছাত্রদল বা অন্য বিরোধী সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থাকায় তাদের বার্তা ভোটারদের কাছে পৌঁছায়নি। শিবির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সক্রিয় ছিল, যা তাদের প্রচারকে আরও শক্তিশালী করেছে।
ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি
ডাকসুর সাবেক জিএস ডা. মুস্তাক হোসেন মনে করেন, শিবিরের বিপরীতে এবার কার্যকর আদর্শিক প্রতিপক্ষ দেখা যায়নি। অন্য সংগঠনগুলো নীতি ও কৌশলে দুর্বল ছিল। ফলে শিক্ষার্থীরা শিবিরকে তুলনামূলকভাবে “ভালো বিকল্প” হিসেবে দেখেছে।
তবে তিনি মনে করেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। ভোট গণনা ও দায়িত্বশীলদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যা বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
ছাত্রশিবিরের এই জয় কেবল সংগঠনের সাংগঠনিক সক্ষমতার প্রমাণ নয়, বরং শিক্ষার্থীদের মানসিকতারও প্রতিফলন। তারা চাইছে ক্যাম্পাস রাজনীতিতে পরিবর্তন—যেখানে ক্যারিয়ার, পড়াশোনা ও দায়িত্বশীল আচরণকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন
