

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে গত বছরের জুলাই মাসে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কারণে সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল তৎকালীন সরকার। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ-ভারতের তিনটি আন্তঃদেশীয় যাত্রীবাহী ট্রেন — মৈত্রী, মিতালি ও বন্ধন এক্সপ্রেস—এর চলাচলও স্থগিত হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে ভারত ট্রেন চলাচল পুনরায় শুরু করতে রাজি হয়নি। এর মধ্যেই ১৫ মাস পেরিয়ে গেছে দুই দেশের যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার পর। এবার বিষয়টি পুনরায় আলোচনায় আনার জন্য বাংলাদেশ আবারও ভারতের উদ্দেশে তৃতীয়বারের মতো আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আগামী বছরের মার্চ মাসে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বিপাক্ষিক ৩৮তম ইন্ট্রা-গভর্নমেন্ট রেলওয়ে মিটিং (IGRM)। এর আগে গত ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ রেলওয়েতে অনুষ্ঠিত প্রস্তুতিমূলক বৈঠকে ট্রেন চালুর বিষয়ে আবারও ভারতকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
২৩ অক্টোবর সেই বৈঠকের কার্যবিবরণী চূড়ান্ত করে তাতে স্বাক্ষর করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম। এরপর মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ফাতেমা-তুজ-জোহরা স্বাক্ষরিত এক দপ্তরী আদেশে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগের দুটি চিঠির ধারাবাহিকতায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আবারও ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে যাত্রীবাহী ট্রেন চালু করার অনুরোধ। একই সঙ্গে যাত্রীদের সুবিধার্থে ট্রেনে লাগেজ ভ্যান সংযুক্ত করা এবং রাজশাহী-কলকাতা রুটে নতুন ট্রেন চালুর অনুমোদন চেয়ে আবেদন পাঠানো হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে চাইছে পদ্মা সেতু ব্যবহার করে মৈত্রী এক্সপ্রেসের নতুন রুট চালু করতে। এই প্রস্তাবে রাতের বেলা ট্রেন চলাচলের বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। পাশাপাশি আপ লাইনে নতুন ক্রসওভার সংযোগ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফাহিমুল ইসলাম বলেন, “আমাদের যোগাযোগের একমাত্র উপায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিঠি পাঠানো। আগে দুইবার চিঠি দিয়েও কোনো জবাব পাইনি। জানুয়ারিতে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত আইজিআরএম বৈঠকেও বিষয়টি আলোচনা হয়েছিল, কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কথা বলা হয়। এবার আমরা তৃতীয়বারের মতো চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন জানান, “আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। রেলওয়ের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে, সেখান থেকে তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতের কাছে পৌঁছাবে। ভারত সম্মতি দিলেই ট্রেন চলাচল পুনরায় শুরু করা সম্ভব।”
গত বছরের আগস্টে অনানুষ্ঠানিকভাবে একাধিকবার যোগাযোগের পরও ভারত যাত্রীবাহী ট্রেন চালাতে রাজি হয়নি। তবে একই সময়ে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলে অনুমতি দেয় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এর ফলে যাত্রীবাহী রেল চলাচল বন্ধ থাকলেও দুই দেশের মধ্যে পণ্য পরিবহন অব্যাহত রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া শাখার এক কর্মকর্তা জানান, “বিষয়টি পুরোপুরি কূটনৈতিক। দুই দেশের সরকারের পারস্পরিক সমঝোতার ওপরই নির্ভর করছে পরবর্তী পদক্ষেপ। আগের চিঠিগুলোর কোনো আনুষ্ঠানিক জবাব এখনো পাওয়া যায়নি।”
গত বছরের ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশে সব ট্রেন চলাচল সাময়িক বন্ধ করা হয়। এর সঙ্গে মিলিয়ে বন্ধ হয় বাংলাদেশ-ভারত যাত্রীবাহী রেল সংযোগ। পরে ১২ আগস্ট দেশের অভ্যন্তরীণ ট্রেন চলাচল পুনরায় শুরু হলেও আন্তঃদেশীয় ট্রেনগুলো বন্ধই থাকে।
বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে মোট আটটি রেল ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট আছে, যার মধ্যে পাঁচটি সচল। এই পথগুলোর তিনটিতে নিয়মিত যাত্রীবাহী ট্রেন চলত—ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস, ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ি মিতালি এক্সপ্রেস এবং খুলনা-কলকাতা বন্ধন এক্সপ্রেস।
২০২৪ সালের ১৭ জুলাই মিতালি এক্সপ্রেস ঢাকায় পৌঁছালেও ১৮ জুলাই নির্ধারিত সময়ের ট্রেনটি ফিরতে পারেনি। পরবর্তীতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় খালি রেক ফেরত পাঠানো হয় ভারতীয় সীমান্তে। তখন থেকেই এই তিনটি আন্তঃদেশীয় ট্রেন স্থগিত অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে, ট্রেন চলাচল পুনরায় শুরু হলে বাংলাদেশে ভারতীয় ভিসা প্রক্রিয়া পুনরায় চালু করা প্রয়োজন হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে ভারতীয় পক্ষ এখনো বাংলাদেশকে পর্যাপ্ত নিরাপদ মনে করছে না যাত্রীবাহী ট্রেন পুনরায় চালুর জন্য।
মন্তব্য করুন