

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


পারস্পরিক ভালোবাসার সম্পর্ক বা সম্মতিতে শারীরিক ঘনিষ্ঠতা হওয়ার পর যেকোনো কারণে বিয়ে না হলে দেশে বিদ্যমান আইনে শুধুমাত্র পুরুষের বিরুদ্ধেই ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
একই পরিস্থিতিতে নারীর বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি দায় প্রযোজ্য না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে আইনি মহলে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
সম্প্রতি হাইকোর্ট এই অসামঞ্জস্যতার ব্যাখ্যা চেয়ে রুল জারি করেছে। আদালত মনে করিয়ে দিয়েছে, সংবিধানে নারী-পুরুষ সমান অধিকারভোগী।
তাহলে একই আচরণের ক্ষেত্রে একজনকে শাস্তিযোগ্য আর অন্যজনকে দায়মুক্ত কেন রাখা হলো, এ প্রশ্নের উত্তর দিতে আইন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি নজরুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে রিটটি শুনানি হয়।
রিটকারীদের বক্তব্য ছিল, ভালোবাসার সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া কিংবা প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করা সামাজিক বাস্তবতা। এতে একমাত্র পুরুষকে দায়ী করা এবং নারীর ব্যাপারে আইন সম্পূর্ণ নীরব থাকা সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ৩১ অনুচ্ছেদে বর্ণিত সমতার নীতির পরিপন্থী।
নতুন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের নির্দিষ্ট ধারায় বলা আছে, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে পরে পুরুষ বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানালে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
তবে নারীর এমন আচরণের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। এমনকি অভিযুক্ত নারী বিবাহিত কি না, এই বিষয়েও আইন কোনো নির্দেশনা দেয় না।
রিটকারীদের আইনজীবীরা আদালতে উদাহরণ দেন, একজন বিবাহিত নারীর সঙ্গেও এমন পরিস্থিতি ঘটতে পারে। তিনি অন্য একজন পুরুষকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে পারেন, এবং সম্পর্ক ভেঙে গেলে পুরুষের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন।
কিন্তু পুরুষ একই অভিযোগ নারীর বিরুদ্ধে আনতে চাইলে আইনে তার কোনো সুযোগ নেই। এতে করে আইনের অপব্যবহারের সম্ভাবনা তৈরি হয়।
আদালতে আরও কিছু মৌলিক প্রশ্ন ওঠে,
কোন পর্যায়ে গিয়ে অপরাধ সংঘটিত হিসেবে ধরা হবে—প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, নাকি সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর?
দুজনই যদি সম্মতিতে সম্পর্কে জড়ান, তাহলে কেবল পুরুষকে দায়ী করা কতটা যৌক্তিক?
একই আচরণের জন্য নারীর বিরুদ্ধে কোনো বিধান না থাকা সাংবিধানিকভাবে গ্রহণযোগ্য কি না?
রিটকারীদের মতে, ব্যক্তিগত ও আবেগঘন সম্পর্ককে ফৌজদারি আইনের আওতায় আনা হলে তা প্রতিশোধ বা চাপ সৃষ্টির উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। সম্পর্ক ভাঙার পর ব্ল্যাকমেইল বা অপব্যবহারের ঝুঁকিও থাকে।
রুল জারির পর আদালত আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে ব্যাখ্যা দিতে বলেছে, কেন শুধু পুরুষকে লক্ষ্য করে এই ধারা তৈরি করা হয়েছে এবং কেন আদালত এটিকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করবে না।
মন্তব্য করুন
