

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় শহর। তিস্তার ভাঙনের পর আশ্রয় নেন তারা নানার বাড়িতে। সেখানে পান তারা মাত্র ৫ শতক জমি।
তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝখানে বাড়ি হওয়ায় ধুধু বালুচরে পরিবারের ভরণপোষণে দিন-রাত খেটেখুটে হয়রান শহর। খাটতে খাটতে কখন যে বয়সটা ৭০ পেরিয়ে ৭৫-এ গিয়ে ঠেকেছে তা ঠিক ঠাওর করতে পারেননি তিনি। তাই তো খাটতে পারেন না আর আগের মতো। কখনো তিস্তা, আবার কখনো বা ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে বসে গালে হাত রেখে ভাবেন কী যেন। কে জানে? এতো বছর খেটে স্ত্রী-সন্তান বা নিজের জন্য কী করতে পেরেছেন, হয়তো তাই।
২০১৪ সালের জানুয়ারির কথা। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ১৪৯০ মিটার দৈর্ঘের তিস্তা সেতুর। এবার আশায় বুক বাঁধেন শহর। অন্তত ভাঙনের কিনারে আসা বাড়িটা রক্ষা হবে তো! কয়েক বছর পর মূল সেতুর সাথে চিলমারী থেকে আসা সংযোগ সড়কের নিকট শুরু হয় রাজধানীর হাতিরঝিলের মতো অনুরূপ একটি সেতুর কাজ।
এবার ভাগ্য খোলে শহর আলীর। খুলে বসেন তিস্তার কিনারে থাকা বাড়ির ধারে একটি ছোট্ট দোকান। সেখানে বিক্রি শুরু করেন চা, বিস্কুট ও পাউরুটিসহ অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য।
২০ আগস্ট ২০২৫। খুলে দেওয়া হয় গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন 'মাওলানা ভাসানী সেতু।' আর স্থানীয়রা শহরের দোকানের ধারের ওই সেতুর নাম দেন 'হাতিরঝিল মডেল সেতু।' দুটি সেতুই দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসতে থাকে নারী, শিশুসহ নানা বয়সের মানুষ। ডাঙারচর অংশে ম্যাজিকের মতো গড়ে উঠতে থাকে বিভিন্ন দোকানপাট। এবার হাতিরঝিল মডেল সেতুর দুইধারের স্থানের নামকরণ নিয়ে শুরু হয় টানাটানি। স্থানীয়রা নাম দেন 'শহরের মোড়।
এদিকে, আরেকটি সাইনবোর্ড লাগানো হয় 'বাবলু নগর' নামে। কিন্তু এমন প্রস্তাব মানতে পারেননি স্থানীয়রা। তারা বিভিন্ন দোকানের সাইনবোর্ডের নিচে মোটা অক্ষরে লিখতে থাকেন 'শহরের মোড়।'
হারুনর রশীদ নামের স্থানীয় এক যুবক এবং আরেক হাজী বলেন, তিস্তার ভাঙনে চর জেগে ওঠায় এটি আগে ডাঙারচর নামে পরিচিত ছিল। হাতিরঝিল সেতু হওয়ার কয়েকমাস আগে দোকান দেন শহর আলী। মাওলানা ভাসানী সেতু খুলে দেওয়ার পর চরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে ছোঁয়া লাগা শুরু হলে স্থানীয়রা হাতিরঝিল মডেল সেতু মোড়ের নাম দেন 'শহরের মোড়।'
এমন একটি চমৎকার সেতুর পাশে স্থানের নামকরণ হবে তার নামে- তা হয়তো বুঝতেই পারেননি শহর আলী। শেষমেশ তার নামের প্রথমাংশ জুড়ে দিয়ে 'ডাঙারচর শহরের মোড়' নামটি প্রাধান্য পাওয়ায় এখন দারুণ খুশি শহর আলী ও স্থানীয়রা।
মন্তব্য করুন
